বরিশালের প্রধান চামড়ার বাজার পদ্মাবতীতে আগের বছরগুলোর মতো চামড়া সংগ্রহ হচ্ছে না। নগরী ও আশপাশের এলাকার সিংহভাগ চামড়া বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানায় মজুদ করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত মূল্য, মূলধন কমে যাওয়া, সঠিক দাম না পাওয়া, লবণের দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। নানা কারণে এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবার চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তারা বলছেন ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা নিয়ে টালবাহানা করায় গত ৫ বছর ধরে তাদের লোকসান দিতে হচ্ছে।
বরিশাল নগরীর পদ্মাবতী এলাকায় চামড়া বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে এসে এবারও তারা ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। দাম না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে চামড়া ফেলে রেখে চলে যেতে দেখা গেছে।
কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীরা বলেন, কোরবানি হওয়া তিনটি গরুর চামড়া নিয়ে তারা বিক্রি করতে এসেছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রতিটি চামড়া ৩০০ টাকার বেশি বলছে না। সরকার যে টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে তার ধারে কাছেও নেই এখানে চামড়ার দাম। বাধ্য হয়ে ওই দামেই চামড়া বিক্রি করেছেন।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহসম্পাদক জিল্লুর রহমান মাসুম বলেন, সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে আমরা চামড়া কিনলে মাঠে মারা পরবো। কেন না আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনলেও ট্যানারি মালিকরা আমাদের কাছ থেকে সেই দামে কিনবে না। এমনিতেই ২০১৬ সাল থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে ঝুঁকি নেওয়াটা আমাদের জন্য বিপজ্জনক। তাছাড়া লবণের দাম বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা সেই অর্থে মূল্য দিচ্ছে না।
পদ্মাবতী এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, গুটি কয়েক ট্যানারি মালিক সারাদেশের চামড়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের পাইকারদের কোনো টাকা দেয় না। বরিশালের পাইকারদের মোটা অংকের টাকা বকেয়া রয়েছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে।
নগরীর মাহমুদিয়া মাদরাসা, রাজ্জাকিয়া মাদরাসা, পুরানপাড়া মাদরাসাসহ একাধিক মাদরাসায় গিয়ে দেখা গেছে, যারা কোরবারি দিয়েছেন তারা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মাদরাসাগুলোতে দান করে গেছেন। মাদরাসাগুলোতে চামড়ার দায়িত্বে থাকারা জানান, অনেকেই দান করেছেন আবার কিছু চামড়া তারা এবার ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সংগ্রহ করেছেন। সংগৃহীত চামড়া লবণ দিয়ে রাখা হয়েছে। ভালো দাম পেলে তা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করবেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা দর দিলেও এই চামড়াকে প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে তাদের প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও তারা বেশি চামড়া কিনতে পারেনি।