শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নড়িয়ায় দোতলা বাড়ির মালিক পেলেন ভূমিহীনের খাসজমি! 

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২২, ০১:৩১

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুরে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে ভূমিহীনের ৪৬ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভূমি বন্দোবস্ত আইন অনুযায়ী ৯ শতাংশের বেশি জমি যাদের রয়েছে তারা সরকারের কৃষি খাস জমি বরাদ্দ নিতে পারবেন না। অথচ খাস জমি বরাদ্দ প্রাপ্ত কেদারপুরের সেই ধনী ব্যক্তি রায়হান শরীফ ও তার স্ত্রী রাসিদা রহমানের অন্তত দুই একর জমি রয়েছে। রয়েছে মসলার কারখানা, বিপণিবিতান। বসবাস করেন পাকা দ্বিতল ভবনে।

সরকারি ঐ খাস জমির পাশেই বিভিন্ন পরিত্যক্ত জমিতে নদী ভাঙনে গৃহহীন অন্তত দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তারা আবেদন করেও সরকারের খাস জমি পাননি। এমন পরিস্থিতিতে গৃহহীনরা ঝুপড়ি ঘরে বহু কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রায়হান শরীফ কেদারপুরের মজিদ শাহ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মজিদ শাহের নাতি। তিনি শরীফ ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি মসলার ফ্যাক্টরির মালিক। তার পাশে অবস্থিত টিন সেডের একটি বিপণিবিতানেরও মালিক তিনি। ওয়ারিস সূত্রে বাবা ও মায়ের কাছ থেকে অন্তত দুই একর জমি পেয়েছেন। বাড়িতে রয়েছে দোতলা পাকা ভবন।

রায়হান শরীফ ও তার স্ত্রী রাসিদা রহমান ২০১৮ সালে কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূমিহীন সনদ সংগ্রহ করেন। এর পর কেদারপুর মৌজার ৪৬ শতাংশ কৃষি খাস জমি পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি শাখা থেকে নড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কেদারপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কাছে আবেদনের তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এরপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাদের দুজনকে ভূমিহীন উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি বন্দোবস্ত জেলা কমিটি ২০১৯ সালে তাদের দুই জনের নামে ৪৬ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দ দেয়। এর পর ২০১৯ সালের ১৯ মে নড়িয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঐ জমি নড়িয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৯৯ বছরের জন্য দলিল করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেদারপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আলী আকবর হোসেন বলেন, ‘আমি শুনেছি রায়হান শরীফ খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। আমি তখন সেখানে কর্মরত ছিলাম না।’

জানা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত নড়িয়ার কেদারপুরে ব্যাপক নদী ভাঙন হয়। তিন বছরে নড়িয়া উপজেলার ১৫ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়, যার মধ্যে কেদারপুরেই আছে ১ হাজার ২০০ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বিভিন্ন ফসলি জমি, বাগান, সড়কের পাশে আশ্রয় নেয়। তারা অনেকে খাস জমি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও পাননি।

কেদারপুরের চরজুজিরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন মোকলেস খান (৬৫)। তার বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ছিল ৫০ শতাংশ। ২০১৮ সালে সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। রায়হান শরীফ যে জমিটি বরাদ্দ নিয়েছেন তার পাশে একটি বাগানের কিছু জমি ভাড়া নিয়ে ঝুপরি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।

মোকলেস খান বলেন, কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। নদীতে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন রিকশা চালাই। সরকারের কাছে জমি চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। তারা ধনিদের খাস জমি দেয়। আর আমরা যারা নিঃস্ব তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। কেদারপুরের রায়হান শরীফের কাছে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে লাইন কেটে দেন। এর পর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, কীভাবে একজন ধনী ব্যক্তিকে ভূমিহীনের জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখব। আর কেউ যদি আবেদন করেন তাহলে এ বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীনদের জমি দেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/ইআ