শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উত্তাল সাগর পার করে নগদ-এর ভাতা বিতরণ লড়াই

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১৯:২২

গ্রীষ্মকালে উত্তাল হয়ে ওঠে সাগরের পানি। এমন সময়ে জেলেরাও নৌকা নিয়ে বের হতে ভয় পায়। সেই সময়েই পটুখালীর রাঙাবালি উপজেলা নামের এই দ্বীপে ছুটেছিলেন কয়েক জন ‘নগদ’ কর্মী। ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ সাগর পার করে এই কর্মীদের ছোটার কারণ ছিলো সরকারের ভাতা এই দূরবর্তী এলাকার খেটে খাওয়া, অসহায়, অল্প শিক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেদিন এই মানুষগুলোই প্রকৃতিকে পরাস্ত করে এই দূরের দ্বীপে পৌঁছে দিয়েছিলেন ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। 

বিদায় বেলায় এই মানুষগুলোর নিবেদন এবং ডাক বিভাগের এমএফএস সার্ভিস ‘নগদ-এর প্রচেষ্টাকে কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করলেন সমাজসেবা অধিদফতরের বিদায়ী মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম। 

তিনি বলছিলেন, নগদ এই ক বছরে ভাতা বিতরণে যে দক্ষতা দেখিয়েছে, তাতে তিনি খুবই সন্তুষ্ট। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর দায়িত্ব দিলে তারা সরকারের শতভাগ ভাতা বিতরণে সক্ষম। 

‘নগদ’ শুরু থেকেই সরকারের বিভিন্ন রকমের ভাতা বিতরণের কাজ করে আসছে। আর এই কাজের একটা বড় অংশ সমাজসেবা অধিদফতরের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ। আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এই ভাতা বিতরণ করা হতো ব্যাংকের মাধ্যমে। সেখান থেকে এই ডিজিটালাইজেশনের কাজটা হয়েছে রফিকুল ইসলামের আমলেই। 

তিনি এই বদলের কারণটা বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘আগে ম্যানুয়ালি এসব ভাতা দেওয়া হতো। গ্রামের অসুস্থ মানুষ, দুস্থ মানুষ, অসহায় ও অল্প শিক্ষিত মানুষ এসব ভাতা পেয়ে থাকেন। তাদের দশ-পনেরো মাইল দূরে গিয়ে টাকা তুলতে হতো। এই কষ্ট লাঘব করার জন্য সরকার চেয়েছে যে, মানুষ যেন নিজের বাড়ি বসে, ঘরে বসে টাকাটা পেতে পারে। এটাই ছিল সরকারের লক্ষ্য। এটা (ডিজিটালাইজেশন করা) ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত। আমি সেটা কার্যকর করার কাজটা করেছি। দ্রুত কাজটা করার চেষ্টা করেছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা এই উদ্যোগটাকে আরও ব্যপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটা সফলও হয়েছে।’

সমাজসেবা অধিদপ্তর বিতরণ করে থাকে বিধবা-স্বামীনিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী শিশু ভাতা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি। এই ভাতাগুলো যারা পেয়ে থাকেন, তারা স্বভাবতই সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষ। এই মানুষগুলোকে ডিজিটালি ভাতার আওতায় আনার তৃপ্তির কথা বলছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিদায়ী ডিজি, ‘আমরা এমন একটা জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করেছি, যারা সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষ, সবচেয়ে অল্প শিক্ষিত মানুষ। এদের একটা বড় অংশ, তিরিশ বা চল্লিশ শতাংশ মানুষ মোবাইলও ঠিকমত ব্যবহার করতে পারেন না; হাতের আঙুল এতোটাই শক্ত হয়ে গেছে কাজ করতে করতে যে, মোবাইল টিপতেও পারেন না। ওটিপি বা পিন কী, তারা এটা বোঝেন না। আমরা এই মানুষগুলোর কাছে ভাতা পৌছে দিতে পেরেছি। এই মানুষদের কাছে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পৌঁছানোটা ছিলো বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জটা পার করতে ‘নগদ’ অসাধারণ একটা ভূমিকা রেখেছে।’

এই ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো। ভূপ্রাকৃতিক সেই চ্যালেঞ্জ ওতরাতে এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদ যে তৎপরতা দেখিয়েছে, তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন রফিকুল ইসলাম, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে পৌছানো কষ্ট, এমন সব এলাকায় ভাতা দেওয়াটা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের। পটুয়াখালীর রাঙাবালির কথা আমি বলবো। আমাদের ভাতা বিতরণের একটা অংশ ছিল গ্রীষ্মকালে। তখন সমুদ্র ছিল উত্তাল, ভয়ঙ্কর ঢেউ। রাঙাবালি বা কুতুবদিয়ায় ওই সময়ে ‘নগদ’-এর কর্মীরা ওই উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গেছেন। ‘নগদ’ রাঙাবালিতে যে কাজ করেছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। তারা ওই মে মাসে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেখানে গিয়ে লোকজনকে একাউন্ট করিয়েছেন, ভাতা পৌঁছনোর কাজ সম্পন্ন করেছেন।’

রফিকুল ইসলাম মনে করেন, দায়িত্ব দিলে নগদ সরকারের সব ভাতাই শতভাগ বিতরণের সক্ষমতা রাখে, ‘সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত হয় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। কোন এমএফএস কত শতাংশ বিতরণ করবে, এটা আসলে মন্ত্রণালয় ঠিক করে। তবে আমি বলতে পারি যে, নগদ-এর সক্ষমতা আছে। তাদের দায়িত্ব দিলে তারা শতভাগ ভাতা বিতরণ করতে পারবে বলে আমি মনে করি। সে ক্ষমতা তাদের আছে।’

বিশেষ করে নগদ-এর ত্রুটিহীন ও স্বচ্ছ ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়া বিশেষ সন্তোষ দিয়েছে প্রবীণ এই কর্মকর্তাকে, ‘নগদ তাদের ভাতা বিতরণ নিয়ে পরিষ্কার একটা রিপোর্ট দেয়। আমরা আবার সেটা যাচাই বাছাই করি। আমরা দেখেছি, নগদ-এর ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছ এবং ত্রুটি প্রায় নেই বললেই চলে।’

ইত্তেফাক/এএএম