জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত 'পরিদর্শকের ভূলে' ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার অভিযোগ করেছেন রাফিয়া ইসলাম নামে একজন ভর্তিচ্ছু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রবিবার (৩১ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটভুক্ত কলা ও মানবিক অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আসন বিন্যাস দেখে এবং মোবাইলে পাঠানো মেসেজের তথ্য অনুযায়ী জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ৩০২ নম্বর কক্ষে যান রাফিয়া।
তবে পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পর কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক রোল নম্বর দেখে রাফিয়াকে জানান, তার পরীক্ষা জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে নয়, নতুন কলা ভবনে হবে। পরে তিনি রাফিয়ার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র জমা নেন।
এরপর পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের হয়ে বিএনসিসির সদস্যদের সহযোগিতায় রাফিয়া মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট সময়ের মধ্যে নতুন কলা ভবনে পৌঁছান। তবে প্রথম শিফটের প্রশ্ন দেখে ফেলায় তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির তথ্য মতে, রাফিয়া ইসলামের ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ছিল ৩১০৪৮৬৮। ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর অনুযায়ী, তার আসন জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ৩০২ নম্বর কক্ষে নির্ধারিত। তাকে পাঠানো মেসেজ ও অনলাইনে প্রকাশিত আসন বিন্যাসের তথ্য নির্ভুল।
জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ৩০২ নম্বর কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক (গ্রেড-২) শুক্লা গোস্বামী, প্রভাষক মো. সাইফুল ইসলাম ও প্রভাষক (গ্রেড-২) সাকিরা সুলতানা মুক্তা।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী রাফিয়া ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের আগেই আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেছি। পরীক্ষা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর আমার আসন অন্য ভবনে বলে জানান দায়িত্বরত ম্যাডাম। পরে তিনি আমাকে আরেক ম্যাডামের কাছে নিয়ে যান; তিনিও একই কথা বলেন। অথচ অনলাইনের তথ্য অনুযায়ী আমার আসন জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রেই ছিল, ম্যাসেজও পেয়েছিলাম। সেগুলো বলার পরেও আমার আসন নতুন কলা ভবনে বলে জানান তারা।’
রাফিয়া বলেন, ‘আমি দ্রুত বের হয়ে রিকশা নিয়ে নতুন কলা ভবনে যাই। তবে সেখানে দায়িত্বরত শিক্ষকরা আমাকে পরীক্ষা দিতে দেননি। তারা আমাকে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক স্যারের কাছে পাঠান। আমি স্যারের কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বলি এবং অন্য শিফটে পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করি, তবে স্যার অনুমতি দেননি।’
জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দায়িত্বরত বিএনসিসি'র এক সদস্য বলেন, ‘একটা মেয়ে পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর বের হয়েছিল, আমরা তাকে রিকশাও ঠিক করে দিয়েছিলাম। তবে কোন ভবনে যাওয়ার কথা বলছিল, তা ঠিক মনে পড়ছে না।’
এদিকে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ৩০২ নম্বর কক্ষের পরিদর্শক শুক্লা গোস্বামী বলেন, ‘যদি ওই ছাত্রীর আসন এই কক্ষেই নির্ধারিত থাকে, তাহলে অন্য কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে আমরা একজন ছাত্রীকে বের করে দিয়েছিলাম; তার আসন অন্য কেন্দ্রে ছিল। সে ভুল করে আমাদের কক্ষে চলে আসেন।’
জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অধ্যাপক সীমা হক বলেন, ‘প্রতিদিন নানা ঘটনা ঘটে। তবে এমন কোনো ঘটনা হয়েছে, কিনা মনে পড়ছে না। তবে তার আসন যদি জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে হয়; তাহলে অন্য কেন্দ্রে পাঠানোর প্রশ্নই আসে না।’
কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল। সে অন্য শিফটে পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে সে যেহেতু আগে একটা শিফটের প্রশ্ন দেখেছিল, সেহেতু তাকে পুনরায় পরীক্ষার অনুমতি প্রদান করার এখতিয়ার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ওই ছাত্রীর আসন জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩০২ নম্বর কক্ষে হয়ে থাকে; তাহলে তাকে অন্য ভবনে পাঠানো ঠিক হয়নি। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে পুরো দায় ৩০২ নম্বর কক্ষের প্রধান পরিদর্শকের।’