জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শিফট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা একাধিক শিফটে নেওয়া হচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভর্তিচ্ছুরা। তাদের দাবি, একক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নেওয়া ও শিফট ভিত্তিক আলাদা ফল না দেওয়ায় প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন ও বিচার অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বমোট ৫টি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩৮৬টি আসনের মধ্যে ৫ম শিফট থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৭৫ জন, যা মোট আসনের ৪৪.৩ শতাংশ। অন্যদিকে প্রথম শিফটে সর্বনিম্ন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র ৩৪ জন, যা মোট আসনের মাত্র ৮.৮ শতাংশ।
এছাড়া দ্বিতীয় শিফট থেকে ৫৮ জন, তৃতীয় শিফট থেকে ৫১ ও চতুর্থ শিফট থেকে ৬৭ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে, শুধু ৫ম শিফটে মেধা তালিকায় শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে প্রথম ২০ জনের মধ্যে মেয়েদের তালিকায় ১১ জন এবং ছেলেদের তালিকায় ১৩ জন রয়েছে।
এর আগে, এদিন সকালে ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষায় পাসের হার ৩৪ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আকবর হোসেন ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ৮১ শতাংশ। পরীক্ষায় পাসের হার ৩৪ শতাংশ। এ ইউনিটের ৩৮৬টি আসনের দশগুণ পরীক্ষার মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন শোভন রায় ও তানভীর নেওয়াজ নামে দুই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘একক প্রশ্নপত্রে মূল্যায়ন চাই’ প্ল্যাকার্ড হাতে এ কর্মসূচী পালন করেন তারা।
অবস্থানকারীদের মধ্যে শোভন রায়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের চতুর্থ শিফট এবং ‘বি’ ইউনিটের দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষায় অংশ নেন। এছাড়া তানভীর নেওয়াজের বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটের দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষায় অংশ নেন।
শোভন রায় বলেন, জাবির ভর্তি পরীক্ষার শিফট পদ্ধতি একধরনের বৈষম্য। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক যাচাই হয়না। কোনো শিফটের পরীক্ষা সবচেয়ে সহজ হয়, আবার কোনো শিফটে পরীক্ষা কঠিন হয়। ফলে জাবির চলমান শিফট পদ্ধতি বাতিল করা উচিত।
তানভীর নেওয়াজ বলেন, শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হয়েছি। কারণ কোন শিফটে প্রশ্ন সহজ হয়; আবার কোন শিফটে কঠিন হয়। তবে আগামী বছর থেকে এ পদ্ধতি বাতিল করে একক প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যাতে ভর্তিচ্ছুদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে শিফট ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে উপাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল না করতে পারলেও কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছি। আগামী বছর শিফট কমিয়ে আনার বিষয়ে চূড়ান্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে।