মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

‘জিনের বাদশা’ পরিচয়ে প্রেম-বিয়ে অতঃপর সাবেক স্ত্রীর হাতেই খুন

আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ০২:২০

‘জিনের বাদশা’ পরিচয়ে প্রতারণাই ছিল জাকির হোসেন বাচ্চুর পেশা। প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফোন দিলে পরিচয় হয় মোছা. আরজু আক্তারের সঙ্গে। ফোনে আলাপ থেকেই প্রথমে প্রেম, এক পর্যায়ে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর আরজু আক্তারকেও প্রতারণার কাজে যুক্ত করেন জাকির।

এদিকে আরজু আক্তারের সঙ্গে সংসার করলেও পরকীয়ায় আসক্ত জাকির প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত সব অর্থ ব্যয় করতেন অনৈতিক কাজে। এ নিয়ে মনোমালিন্য থেকে এক পর্যায়ে আরজুকে তালাক দেয় জাকির। তারপরও তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক ছিল। প্রায়ই এক সঙ্গে বসবাস করতেন। এরপরও জাকিরের একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক ও তালাকের কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন আরজু আক্তার। সে অনুযায়ী লঞ্চে ভোলা যাওয়ার পথে কেবিনে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে জাকিরকে হত্যা করেন তিনি।

গত ২৯ জুলাই সদরঘাট এলাকায় এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে জাকির হোসেন বাচ্চুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ৩১ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন জাকিরের প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার।

১ আগস্ট মামলার তদন্তভার বুঝে নেয় পিবিআই। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ভোরে সাভারের নবীনগর এলাকায় ঢাকাগামী একটি বাস থেকে আরজু আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। এদিনই আদালতে হাজির করলে আরজু আক্তার ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। গতকাল বুধবার ধানমন্ডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, জাকির হোসেন বাচ্চুর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দীনে। সেখানে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা থাকতেন। প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাকির দুই বছর আগে এক দিন ফোন দেন আরজু আক্তারকে। জিনের বাদশা পরিচয়ে দেওয়া সেই ফোন থেকেই প্রেম, এরপর তাকে বিয়ে করে ঢাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা।

বিয়ের পর আরজু জানতে পারেন তিনি জাকিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। এরপরও জাকিরের একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিবাদের জেরে দুই মাস আগে তাদের তালাক হয়ে যায়। তালাক হলেও তারা একে অপরের বাসায় এক সঙ্গে থাকতেন। তালাক দেওয়া ও একাধিক সম্পর্কের কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন আরজু। এর মধ্যে আরজু জানতে পারেন ২৯ জুলাই জাকির লঞ্চে ভোলায় গ্রামের বাড়ি যাবেন। আরজুর বাড়ি জাকিরের বাড়ির পাশের গ্রামে। এ কারণ দেখিয়ে কেবিন ভাড়া করে তাকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাকিরকে বলেন আরজু। এরপর ঐ দিন সকালে এমভি গ্রিন লাইন লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে তারা ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লঞ্চে ওঠার আগে একপাতা ঘুমের ওষুধ ও এক বোতল দুধ কিনে নেন আরজু।

পিবিআই এসপি বলেন, লঞ্চের কেবিনে প্রথমে তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এরপর জাকির পানি আনতে লঞ্চের নিচ তলায় গেলে দুধের বোতলে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখে আরজু। কিছুক্ষণ পর জাকির কেবিনে এলে তাকে ওষুধ মেশানো দুধ খেতে বলে। দুধ খেয়ে জাকির ঘুমিয়ে পড়লে তার হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন আরজু। এরপর আরেকটি ওড়না দিয়ে জাকিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি।

ইত্তেফাক/এমএএম