বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শ্রাবণ-ভাদ্রেও ঘুচবে না বৃষ্টির অভাব

আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫০

শ্রাবণের বিদায় লগ্ন এখন। আসছে ভাদ্র। বর্ষাকাল শেষ হতে চলল। স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। দিনের বেলায় কাঠফাটা রোদ আর আকাশ জুড়ে শরতের পেঁজাতুলো মেঘের আনাগোনা। মাঝে মধ্যে আকাশে সজল সঘন মেঘের আনাগোনা হয়, এক পশলা বৃষ্টিও হয়। তবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আজি শ্রাবণ ঘন গহন মোহে বা এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়, এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে তপনহীন ঘন তমসায়’—সেই শ্রাবণের অঝোরধারার বর্ষণমুখর দিনের চিত্রপট এবছর এলো না। কৃষিজীবী মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। ভরা শ্রাবণে অতীতে শেষ কবে এমন পরিস্থিতি দেখেছেন মনে করতে পারছেন না মানুষ।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শ্রাবণ মাসে ঋতু হিসেবে বছরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় জুলাইয়ে। তবে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে এ বছর এই চিত্র পুরোই বদলে গেছে। গড় বৃষ্টিপাতের অর্ধেকও হয়নি এবারের জুলাইয়ে। সেই সঙ্গে সারা দেশে বয়ে গেছে তীব্র দাবদাহ। শ্রাবণের মতো-ভাদ্রেও ঘুচবে না বৃষ্টির অভাব। স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মে. আজিজুর রহমান বলছেন, চলতি আগস্টে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মিলবে না। দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকবে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাসের মাঝামাঝিতে দেখা দিতে পারে বন্যা। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে কয়েক দিন বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। জুলাইয়ের মতো আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হবে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। একটি লঘুচাপ মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, চলতি মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকবে। বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তাপপ্রবাহ এলাকায় ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকতে পারে। এছাড়া মাসের মাঝামাঝিতে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণে কিছু এলাকায় স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জুলাই মাসের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জুলাইয়ে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে সিলেট বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে পর্যাপ্ত জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি, প্রখর সূর্যকিরণ এবং সর্বোপরি মৌসুমি বায়ু দুর্বল থাকার কারণে গত ৫, ৭ থেকে ২১, ২৩ এবং ২৯ জুলাই রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, সিলেট বিভাগ এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এসময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাজশাহীতে (১৩ জুলাই) ও সৈয়দপুরে (১৪ জুলাই) রেকর্ড করা হয়। এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল বলেও জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি।

  • বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টি নেই কেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে মেঘ পুঞ্জীভূত হতে পারছে না। গরম বাতাসের ধাক্কায় মেঘে যে পানি থাকে তা বৃষ্টি হয়ে নামার আগেই বাষ্প হয়ে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র গরমের কারণে বাতাসের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে পরিবর্তন এসেছে। আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য কম বৃষ্টি, বাতাসের গতিবেগ কমে যাওয়া, জলীয় বাষ্পের আধিক্য, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি। গত এক দশকে গ্রীষ্ম ক্রমে দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং শীতকালেও গড় তাপমাত্রা বেশি থাকছে। সেই সঙ্গে বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণও কমে গিয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বৃষ্টিপাত হচ্ছে অন্য মৌসুমে। এর পেছনে মূল কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। মূলত, ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আবহাওয়ায় এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

  • ৪১ বছরে বর্ষায় রেকর্ড খরা, ৩০ বছরের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তপ্ত আবহাওয়া

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভরা বর্ষাকালেই সারা দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭.৬ শতাংশ (অর্ধেকেরও কম) বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা গত ৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত তথা অকালে খরার রেকর্ড। এ সময়ে গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তপ্ত ছিল আবহাওয়া-প্রকৃতি। ভরা বর্ষা-বাদলের গত জুলাই মাসে সারা দেশে বৃষ্টি ঝরেছে মাত্র ২১১ মিলিমিটার। মওসুমের এ সময়ে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৯৬ মি.মি.। গড়ে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে ২৮৫ মি.মি.। জলবায়ুর হিসাবে গত ৩০ বছরে জুলাই অর্থাৎ ভরা বর্ষায় দেশে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৪৯৬ মি.মি.।

  • ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

সাগরে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হওয়ায় উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই সব সমুদ্রবন্দরে তোলা হয়েছে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত। গতকাল বুধবার এ পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রবন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ (তিন) নম্বর (পুনঃ) ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এদিকে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আভাস থাকায় নদীবন্দরগুলোতেও এক নম্বর সর্তকসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ইত্তেফাক/ইআ