ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ ছাড়লেন মো. আরফান আলী। যদিও এমডি পদে চাকরি করার জন্য তাঁর আরও ১০ বছরের বেশি বয়স রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ব্যাংকে তার শেষ কর্মদিবস ছিল। এদিন বিকেলে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে বিদায় জানান।
ব্যাংক এশিয়ার দায়িত্ব ছাড়ার পর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম নিয়ে বড় পরিসরে কাজ শুরু করবেন বলে ইত্তেফাক অনলাইকে জানান আরফান আলী। তিনি বলেন, ‘আমি কর্মজীবনে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আরও বড় পরিসরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজের জন্য ব্যাংক পেশা ছেড়ে দিচ্ছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের জীবনমান আরও উন্নত করা যাবে।’
আরফান আলী বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। ব্যাংকগুলো যখন বড় গ্রাহকদের পেছনে ছুটেছেন, তখন তিনি গেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংক হিসাব খুলতে। ফলে ব্যাংক খাতে তার স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি হয়েছে।
তার প্রচেষ্টায় মুন্সিগঞ্জে ২০১৪ সালে ১৭ জানুয়ারি প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। পরে সারাদেশে তা বিস্তৃতি লাভ করে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের বিরাট জনগোষ্ঠি ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন আরফান আলী।
‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে (বর্তমানে আমার বাড়ি আমার খামার) প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং সুবিধা দিতে এবং কিউআর কোডের মাধ্যমে মাইক্রো মার্চেন্ট লেনদেন চালুতেও তিনি অবদান রাখেন। দেশের সাড়ে ৪ হাজার ডিজিটাল পোস্ট অফিসে ব্যাংকিং সেবা চালুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইডিসি), সিটি ডিজিটাল সেন্টারে (সিডিসি) এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর মাধ্যমে সাধারণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে অবদান রাখেন। তাঁর কর্মজীবনের সবকিছুই ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ঘিরে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ব্যাংকিং সেবা সহজিকরণে কাজ করে গেছেন আরফান আলী। সোনালী ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি হওয়ায় তিনিই প্রথম পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলাপ করে গ্রাহকদের পাসপোর্ট ফি জমা সংক্রান্ত ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালে চার-পাঁচটি ব্যাংক এ সংক্রান্ত চুক্তি করে। তখন থেকে ব্যাংক এশিয়ার সকল শাখার পাশাপাশি এজেন্ট আউটলেটগুলো থেকেও এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরফান আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন। এরপর ১৯৯১ সালে আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশনারি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে কোরীয় হানিল ব্যাংকে (উরি ব্যাংক) যোগ দিয়ে ঢাকায় অফিস স্থাপনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৯ সালে ব্যাংক এশিয়া প্রতিষ্ঠার আগে তিনি ব্যাংকটিতে যোগদান করেন। ২০১৬ সালের আগস্টে তিনি ব্যাংক এশিয়ার এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিন বছর করে দুই মেয়াদে তাঁর ছয় বছরের মেয়াদ শেষ হবে শুক্রবার। সেই হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার ছিলো তার শেষ কর্মদিবস।
সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি সততা এবং নিষ্ঠার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দুই মেয়াদে ব্যাংক এশিয়ায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করেছেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা কিংবা ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের পাশাপাশি মানবিক ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস ছিল তাঁর সবসময়।। তিনি মনে করেন, সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং পরিসেবার আওতায় আনতে না পারলে মানবিক কিংবা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কোনোটিই নিশ্চিত করা যাবে না।
সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত আর্থিক ও ব্যবস্থাপনা মানদণ্ড নির্ধারণের মাধ্যমে অনুকরণীয় দৃ্টান্ত স্থাপন করেছেন আরফান আলী। কর্মীদের সততা এবং দক্ষতার মানদণ্ডে উন্নীত করার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
ব্যক্তিজীবনে সৎ-সহজ-সরল এক মাটির মানুষ আরফান আলী। তিনি মনে করেন, শহরের সকল সুযোগ সুবিধা প্রত্যন্ত গ্রামেও সৃষ্টি করা গেলে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত উন্নয়ন ঘটবে। সেই লক্ষে ব্যক্তিপর্যায় থেকে শিক্ষা প্রসারে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্কুল প্রতিষ্টার পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহয়তা করে যাচ্ছেন নিজ উদ্যোগে।