জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে সিলেটের নগরীর বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও পেট্রল পাম্পগুলোতে জটলা চলছে। কোন কোন স্থানে বিক্ষোভও করছে সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রত্যেকটি পাম্পে গাড়ি ও মোটর সাইকেল চালকদের প্রচণ্ড ভিড়। সুযোগে অধিক লাভের আশায় সিলেটের কতিপয় অসাধু জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা রাত ১০টা থেকে পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেন।
আবার অনেকে ১০০ টাকা লিটারে পেট্রল বিক্রি করেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের কদমতলি এলাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনে এ চিত্র দেখা গেছে। তেলের দাম বাড়িয়ে বিক্রির পায়তারায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেছেন গ্রাহকরা। এসময় তাদের টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে সড়ক অবরোধ অব্যাহত ছিলো ও ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের বিক্ষোভ চলছিলো।
নতুন দাম অনুযায়ী— প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ আগস্ট) রাত ১০টায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। ৮ মাসের ব্যবধানে আবার বাড়ানো হলো তেলের দাম। তবে ওই সময় পেট্রোল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ানো হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে এই দাম পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়। ভারত গত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি এবং পেট্রল ১০৬ দশমিক ০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে।এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪ দশমিক ০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা (১ রুপি=১.২৩ টাকা ধরে)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪ দশমিক ০৯ এবং পেট্রল লিটার প্রতি ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো ছিল সময়ের দাবি।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিগত ছয় মাসে (২২ ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রয়ে (সব পণ্য) ৮০১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে, আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয়ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।