শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দালালের দখলে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ০১:১১

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রীতিমতো দালালদের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কমিশনের আশায় এসব দালালদের লালন পালন করছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একশ্রেণির ডাক্তার।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কয়েকটি হাসপাতাল। এসব প্রতিষ্ঠানের রোগীর যোগান দেওয়ার জন্যই বেপরোয়া দালাল চক্র। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতিসম্প্রতি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব চালু হওয়ার পর চক্রটি বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোগীদের ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেওয়া, দালাল যে ডাক্তারের সঙ্গে সম্পৃক্ত তার কাছে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া এবং ইচ্ছেমতো টেস্ট লিখে নেওয়া, কথা না শুনলে অপদস্থ করা, এমনকি কৌশলে রোগীকে কমপ্লেক্স থেকে বের করে নিয়ে দালালের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য করা প্রতিদিনের ঘটনা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় উপজেলার চর লরেন্স গ্রামের আবু ছিদ্দিকের ছেলে আক্তার হোসেনের সঙ্গে। পরিচয়ে জানান, তিনি ডাক্তার সঞ্জয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট। ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিউ উপকূলের হয়ে কাজ করেন। তিনি আরো জানান, ডাক্তাররা প্রতিটি পরীক্ষার বিপরীতে কমিশন পান শতকরা ৫০ টাকা। আপনাদের কি লাভ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একটা বেতন পাই, আবার দিন শেষে স্যার (ডাক্তার) ইনকাম অনুযায়ী একটা অংশ আমাদেরকে দেন।

এ সময় চরমার্টিন গ্রামের নাজমা আক্তারের সোরগোল শুনে তার নিকট গিয়ে জানা যায়, পারভেজ নামের এক দালাল নাজমা এবং তার ছেলের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নেওয়া টিকিট (যেটাতে ডাক্তার ব্যবস্থা লিখে) নিয়ে গেছে। ফেরত চাইলে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছে। পরে অন্য রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে পারভেজ পালিয়ে যায়। সেবা নিতে আসা চরজগবন্ধু গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, পারভেজ টিকিট নিয়ে পরে সেটা ফেরত দিতে গড়মসি করে। শেষ পর্যন্ত রোগীকে তার চুক্তি করা ল্যাবে নিয়ে যাবে এবং ভিজিট নিয়ে ডাক্তার দেখাবে ও ইচ্ছেমতো টেস্ট করতে বাধ্য করবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ডাক্তারদের চেম্বারের স্বাভাবিক প্রয়োজনে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে সহকারী একজন রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে। তবে অবশ্যই তারা বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন নয়। তিনি আরো বলেন, ১৯ জুলাই ২০২২ খ্রি. হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল ল্যাব উদ্বোধনের পর থেকে দালালদের উৎপাত ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। আমি গত চার দিন আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দালালমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন) আহমেদ কবীর বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দালালমুক্ত করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তার কর্মকর্তা-কর্মচারী চাইলে দালালদের দৌরাত্ম্য থাকতে পারে না।

ইত্তেফাক/ইআ