রোববার, ০৪ জুন ২০২৩, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

পানি সংকট ও জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি: সালথার কৃষকদের কপালে দু:শ্চিন্তার ভাঁজ!

আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২২, ২০:৩৪

জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ফরিদপুর সালথা উপজেলার কৃষকদের ঘরে ঘরে। অতিরিক্ত খরচের চিন্তায় দু:শ্চিন্তার ভাঁজ এখন তাদের কপালে। এবার সালথার জলাশায়গুলোতে বর্ষার পানি সংকটের কারণে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকদের চরম ভোগান্তির রেশ কাটতে না কাটতেই জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে চমকে উঠেছেন তারা। 

কৃষকরা বলছেন, সব দিক দিয়ে সংকটে আছি আমরা। মাঠে নেই পানি। রয়েছে শ্রমিক সংকট। সাব-ওষুধের দাম বাড়তি। এখন আবার বেড়ে গেলে ডিজেলের দাম। শুধুমাত্র জ্বালানী তেলের দাম বাড়ায় পদে পদে বাড়তি খরচ বাড়বে আমাদের। কি থেকে কি করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা মাঠে পড়ে যাব।

সম্প্রতি গত ৫ আগস্ট মধ্যরাতে দেশে জ্বালানী তেলের মূল্য আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছেন সরকার। এখন একজন ক্রেতাকে প্রতি লিটার ডিজেল-কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।  

জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার পর মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সালথা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমির মাঠে গিয়ে ফসল উত্পাদন নিয়ে আলাপ হয় একাধিক কৃষকের সাথে। এ সময় কৃষক আবুল কালাম, জব্বার মুন্সী, হাফেজ মোল্যা ও মনির মোল্যা বর্তমানে ফসল ফলাতে নানা সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, কৃষি নির্ভরশীল সালথা উপজেলায় যে কোন ধরনের ফসল উত্পাদনে পদে পদে জ্বালানী তেলের প্রয়োজন হয়। যেমন ডিজেল দ্বারা চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে প্রথমে জমি চাষ করতে হয়। তারপর শ্যালো মেশিন দিয়ে একাধিকবার সেচ দিয়ে ফলাতে হয় ফসল। এরপর উত্পাদিত ফসল বাজারজাত করতে ভাড়া করতে হয় জ্বালানি তেল দ্বারা চালিত পরিবহন। যেকারণে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ায় কৃষি সংশ্লিষ্ট সব খাতে বাড়তি অর্থ খরচ গুনতে হচ্ছে বা হবে। বাড়তি খরচ করে ফসল উত্পাদনের পর তা ন্যায্য দামে বিক্রি করা যাবে কিনা সেই দু:শ্চিন্তায়ও রয়েছি আমরা। কারণ ফসল উঠার পর অনেক সময় উত্পাদন খরচের চেয়ে কমে পন্য বিক্রি করতে হয়।

উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি গ্রামে কৃষক আবুল বাসার মোল্যা ও গট্টি ইউনিয়নের রঘুয়ারকান্দী গ্রামের শহিদ মিয়া বলেন, পাওয়ার টিলার দিয়ে আগে একবিঘা জমি চাষ করতে ২১০০ টাকা লাগতো। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ার পর এখন তা ৩ হাজার টাকা দিয়ে চাষ করতে হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে একবার সেচ দিতে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা বেশি খরচ করা লাগছে। তাছাড়া আগামীতে উত্পাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পরিবহনেরও বাড়তি খরচ গুনতে হবে।      
এদিকে কৃষকরা জানিয়েছেন, সালথায় প্রতিবছর এই সময় সোনালী আঁঁশ পাট কাটার নিচু জমিগুলোতে আমন ধানের বীজ বোপনের ধুম পড়ে যেতো। অনেকে পাট জমিতে থাকতেই তার মধ্যে ধানের বীজ বোপন করতেন। তবে এবার পানি সংকটের কারণে ধানের বীজ বোপন করতে পারছেন না। এবার ধানের বীজ আগে বোপন করে তা থেকে চারা তৈরি করছেন। তারপর প্রথমে পাওয়ারটিলার দিয়ে জমি চাষ করে তারপর সেচ দিয়ে সেই ধানের চারা রোপন করতে হচ্ছে। এতে তাদের ডাবল কষ্ট করতে হচ্ছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর আমন চাষে সম্পূরক সেচ বেশি প্রয়োজন হবে। জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার ফলে জমি চাষ ও সেচ খরচও বাড়বে। বাড়বে পরিবহন খরচও। বিশেষ করে ডিজেলের দা বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব কৃষকদের উপর বেশি পড়বে। তবে কৃষকদের আমরা উত্তম কৃষি চর্চা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছি। যাতে উত্পাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচের প্রভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, সালথায় এবার ১১ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধান বীজ বোপন এবং চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএইচপি