বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে স্কুল, দুর্ভোগে ৭ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী

আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:২০

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং পূর্ণিমার প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে মেঘনা নদীর জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

ফলে উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার অন্তত ২১টি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাত সহস্রারাধিক শিক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসময়  জোয়ারের স্রোতে কাচা ও পাকা সড়ক, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেড়ে যায়। বেড়ীবাঁধ না থাকায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে প্লাবিত হয় মুন্সীরহাট বাংলাবাজার, জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। জোয়ারের স্রোতে সহস্রাধিক কাঁচা বসতঘরের ভিটিতে পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ পানিতে ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁচা ও পাকা সড়ক।

এসময় এসব এলাকার ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৪টি মাদ্রাসার আঙ্গিনায় ও শ্রেণি কক্ষে জোয়ারের পানি ডুকে পড়ে। এতে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়তে হয়।

রবিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে দক্ষিণ বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক, মধ্য চর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন দাসসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে দুপুর ২টা থেকে জোয়ারের পানি বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা এবং শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে থাকে। এতে করে বিদ্যালয়ে শ্রেণি পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের চলাচলের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এসময় কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। এ ছাড়া ৫ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসময় শ্রেণি পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।

পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল চন্দ্র মজুমদার বলেন, দুপুরে ক্লাস চলাকালেই জোয়ারের পানি বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা, মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দেওয়া হয়।

দক্ষিণ বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে এসে রবিবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বিদ্যালয়গুলোতে ঢুকে পড়ায় শিক্ষার্থীরা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ৫ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা অধিক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রধান শিক্ষক-গনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যালয়গুলো মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়া এবং বেড়ীবাঁধ না থাকায় নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ার হলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে এই শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. শান্তুনু চৌধুরী বলেন গত কয়েকদিন মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পোহাতে হয়। তবে সবাইকে নিরাপদে থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি