শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ ছিল নিরাপত্তা ইস্যু

পরস্পরকে দুষছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও বিআরটি
শাস্তিমূলক ব্যবস্হা গ্রহণে আপত্তি নেই চীনের

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০১:২৯

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজের সময় ব্যস্ততম এ সড়কে নিরাপত্তার অবহেলার বিষয়টি আগেই ধরা পড়ে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কিছুই করেনি। এ উড়াল সড়ক নির্মাণের বড় অংশের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) নিরাপত্তা বিষয়ক চিঠি এবং প্রকল্প পর্যালোচনার সভায় দেওয়া পরামর্শকে আমলেই নেয়নি। কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি নির্মাণ এলাকায়। নিরাপত্তার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে, বিআরটি এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে। নিরাপত্তার বিষয়ে দায় কার তা নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্হা না নেওয়া কিংবা কাজ বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ঢাকা বিআরটি) ব্যবস্হাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, কাজ চলাকালীন পুরো প্রকল্প এলাকায় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের লোকজন পরিদর্শনে যান। কিন্তু পুরো বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের। এজন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সুপারভিশন একটা বিশাল কাজ। এজন্যই কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়। অবশ্য এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে। বিশেষ করে এ উড়াল সড়কের প্রকল্প এলাকার যান ও জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত ২৫ জুলাই এ বিষয়ে সতর্ক করে একটি চিঠিও দেওয়া হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, নিরাপত্তা নিয়ে একাধিকবার নির্দেশনা ও উপদেশ দেওয়ার পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছে না। এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করা না হলে জনগণের নিরাপত্তার জন্য তা প্রকল্পের ‘কাজ বন্ধের নির্দেশনার’ মতো সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তবে নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তায় ঘাটতির বিষয়টি সামনে এলেও প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় এবং ঢাকা বিআরটি কোম্পানির পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ যেমন ওঠে, তেমনি এ বিষয়ে তাদের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

শাস্তিমূলক ব্যবস্হা গ্রহণে আপত্তি নেই চীনের

রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেট কারে পড়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্হা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সঙ্গে সাক্ষাত্কালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় লি জিমিং গার্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

ঢাকা বিআরটি প্রকল্পের সওজ অংশের নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদন্েতর জন্য চীন থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি। প্রতিনিধি দলটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্ত্তত।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সমগ্র জাতি ব্যথিত। তিনি বলেন, যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিতে আমরা বুয়েটের এক জন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করেছি। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কঠোর আইনগত ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।

এ সময় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার, বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্হাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম, প্রকল্পের পরামর্শক টিমের প্রধান মি. টিগ ম্যাকরিন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্হিত ছিলেন।

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি নির্মাণ করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত।

চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। উত্তরার যে এলাকায় ঐ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই অংশের কাজ করছে ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।

গত ১৫ আগস্ট বিকালে উত্তরা জসীম উদ্দীন রোডের মাথায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটির একটি বক্স গার্ডার ট্রেইলারে তোলার সময় ভারসাম্য হারায় ক্রেইন। বিপুল ওজনের কংক্রিটের গার্ডারটি টঙ্গীমুখী সড়কে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে।

ভারী ঐ গার্ডারের চাপে মুহূর্তের মধ্যে চ্যাপটা হয়ে যায় গাড়িটি। এতে গাড়ির ভেতরেই মৃতু্য হয় পাঁচ জনের, দুই জনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। তারা সবাই এক পরিবারের সদস্য।

দুর্ঘটনার দিনই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদনে কমিটি বলেছে, দুর্ঘটনার পেছনে চীনা ঠিকাদার কোম্পানি সিজিজিসির ‘গাফিলতি’ পাওয়া গেছে। 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি