শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তাইওয়ান প্রণালিতে ফের উত্তেজনা

৩০ যুদ্ধবিমান ও পাঁচ চীনা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ০১:১১

চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দুই দেশের দ্বন্দ্বে তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পরই এই উত্তেজনা বাড়ে। এরপর মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল তাইওয়ান সফরে আসে। গতকাল তাইপে এসে পৌঁছেছেন মার্কিন অঙ্গরাজ্য ইন্ডিয়ানার এক গভর্নর। ফলে চীনও উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া অব্যাহত রেখেছে। গতকালও তাইওয়ান ঘিরে ৩০ যুদ্ধবিমান ও পাঁচ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মহড়া চলাকালীন চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড নতুন করে অন্তত ৩০টি যুদ্ধবিমান এবং পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালিতে মোতায়েন করেছে, যা নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ তাইওয়ান সরকার।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অন্তত ১৭টি চীনা সামরিক বিমান ও পাঁচটি জাহাজকে তারা অনুসরণ করতে পেরেছে যার মধ্যে আটটি বিমান তাইওয়ান প্রণালির মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। আন্তর্জাতিক জল ও আকাশসীমা আইন অনুযায়ী, এই রেখাকে আসলে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে বিভাজন রেখা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু চীন যেহেতু তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে, তাই তারা কোনোদিনই ঐ বিভাজন রেখাকে মানে না।

তাইওয়ান সরকার জানিয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মির যে আটটি সামরিক বিমান মধ্যরেখা অতিক্রম করেছিল, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি শিয়ান জেএইচ-৭ বোমারু বিমান, দুটো সুখোই সু-৩০ যুদ্ধবিমান ও দুটো শেনইয়াং জে-১১ জেট। চীনের এই অতি তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে তাইওয়ান প্রণালিতে নজর রাখতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও যুদ্ধ জাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম মোতায়েন করেছে। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি দাবি করেছে, তাইওয়ানের একেবারে নাকের ডগায় পেংঘু দ্বীপের ওপরে নজরদারি চালাচ্ছে তাদের বিমান। তাইওয়ান বিমানবাহিনীর ভাইস চিফ অব স্টাফ টুং পেই-ইউন অবশ্য চীনের সেই দাবি নস্যাৎ করেছেন। তিনি বলেন, চীন সব সময়েই চাপ বজায় রাখার জন্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে কথা বলে।

এদিকে তাইওয়ান নিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। অতিসম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেছেন আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস। ওয়াশিংটনের সেই সিদ্ধান্ত সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাইওয়ানের ওপরে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। যা চীন মোটেও ভালো চোখে দেখবে না বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তবে প্রাইস স্পষ্টই বলেছেন, ‘চীন গোটা অঞ্চলের (তাইওয়ান প্রণালি) স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে চায়। আমরা তা হতে দেব না। আমাদের আগামী কিছু পদক্ষেপেই তা সকলে বুঝতে পারবেন।’

তাইপেতে ইন্ডিয়ানার গভর্নর

যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ইন্ডিয়ানার গভর্নর এরিক হলকম্ব গতকাল রবিবার তাইওয়ানর রাজধানী তাইপেতে পৌঁছান। এরিক এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করবেন। আজ সোমবার সকালে তিনি তাইওয়ান প্রেসিডেন্ট সাই-ইং ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়তেই তার এই সফর।

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে জাপান

টোকিও তাদের এখনকার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা ১০০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কিলোমিটার করে সেগুলো দক্ষিণাঞ্চলীয় নানসে দ্বীপপুঞ্জের আশপাশ জুড়ে বসাতে চাইছে। চীনের বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ সক্ষমতা জোরদার করতে জাপান ১ হাজার দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছে দেশটির পত্রিকা ইয়োমিউরি। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল রবিবার দৈনিকটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, টোকিও তাদের এখনকার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আধুনিকায়ন করে পাল্লা ১০০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কিলোমিটার করতে চাইছে। —রয়টার্স, বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা

ইত্তেফাক/ইআ