শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘কেরোসিন নেই, খাবার নেই- আমরা শুধু অন্ধকার দেখছি’

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৩৪

সূর্য ওঠার পর আগস্টের শেষ দিকে এক সকালে শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিম উপকূলের কাছে ছোট দ্বীপ মান্নারের সৈকতে ডজনখানেক জেলেকে দিনের শুরুর কাজ হিসেবে তাদের জাল বিছিয়ে রাখতে দেখা যায়। এরা তুলনামূলক ভাগ্যবান। কেননা, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা দেশটিতে মুখ থুবড়ে পড়া এই জেলে সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন আর সমুদ্রে যেতে পারছেন না।

এদেরই একজন সুসাইপিল্লাই নিকোলাস। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবই কঠিন। কেরোসিন নেই, ঘরে কোনো খাবারও নেই। সমুদ্রে যেতে পারলেই আমাদের কাজ আছে, না হলে কোনো কাজ নেই। আমরা ক্ষুধার্ত। আমাদের পাশে কেউ নেই। চোখে শুধুই আমরা অন্ধকার দেখছি।’ এই কথাগুলো শুধু একজন জেলের নয়, তার কথার মাধ্যমে সব জেলের কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জ্বালানির ঘাটতি আর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে তারা কেরোসিন জোগাড় করতে পারছেন না, যার কারণে মাছের খোঁজে নৌকা নিয়েও বের হওয়া হচ্ছে না তাদের, জুটছে না খাবারও। কেরোসিনের ঘাটতির কারণে যারা একসময় নিজেই নৌকা নিয়ে বের হয়ে পড়তে পারতেন, তাদের অনেককেও এখন একইভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। সমুদ্রে যাওয়া নৌকাগুলোতে বেড়েছে জেলের সংখ্যা, আগে যেখানে নৌকাপ্রতি ১৫ জন জেলে থাকতেন, এখন হয়েছেন ৪০ জন। তাই দিন শেষে লাভের অঙ্ক বলতে তেমন কিছু আর তাদের আসে না।

দেশটিতে এখন আগের বছরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি ৬৫ শতাংশ, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি চলে গেছে ৯৪ শতাংশের কাছাকাছি। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় এবং পরিশোধনাগারের জন্য অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে না পারায় এখন দেশটির অধিকাংশ মানুষেরই জীবন আর চলছে না। সপ্তাহ আগে সরবরাহ ফের শুরু হলেও শ্রীলঙ্কা জ্বালানিতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া শুরু করায় দাম আগের তুলনায় চার গুণ হয়ে গেছে। সরকার সংকট নিরসনের চেষ্টা করলেও ঋণের বোঝার কারণে তা পেরে উঠতে পারছে না। সম্প্রতি আইএমএফ নতুন ঋণ দিতে সম্মতি জানালেও তাতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নানা শর্ত। তাই শেষ পর্যন্ত দেশটির অর্থনীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সাধারণ মানুষ কী করে বেঁচে থাকবে, সেই প্রশ্ন আজ বারবার ঘুরে ঘুরে ফিরে আসছে।

ইত্তেফাক/ইআ