মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

প্যানেল নির্বাচনের এক মাস পেরোলেও নতুন উপাচার্য পায়নি জাবি

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৩০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার অপেক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ ৮ বছর পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেননি আচার্য। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেনি।

এর আগে গত ২ মার্চ উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মেয়াদকাল শেষ হয়। পরে অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে উপাচার্য হিসেবে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১ (১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে ৩ সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সে হিসেবে গত ১২ আগস্ট বিশ্বাবিদ্যালয়ের বিশেষ সিনেট সভায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের তিনটি পক্ষ থেকে মোট আটজন প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া মোট ৮২ জন ভোটারের মধ্যে ৭৬ জন সিনেট সদস্য ভোট প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত তিন জনের মধ্যে একজনকে চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন। এর আগে, ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক অধ্যাপক আমির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিবার্চিত ডিন, শিক্ষক সমিতির দুই বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, তিনবার নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য ও অর্থ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তিনি ২০১১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের চাঁদপুরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

নির্বাচনে ৪৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। তিনি বর্তমানে সমায়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে, অধ্যাপক নূরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), শিক্ষক সমিতির সভাপতি, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া নির্বাচনে ৩২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের’ বর্তমান সভাপতি এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ছয়বারের নির্বাচিত সভাপতি। তারা তিনজনই শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন বলে জানা যায়। তবে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করায় উপাচার্য হওয়ার দৌঁড়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার।

এদিকে সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম নিজের দায়িত্ব নিয়ে নানা জটিলতায় পড়েছেন। উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদপত্র উত্তোলন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটসহ জরুরি সভাগুলো বসছে না। অন্যদিকে আটকে আছে অর্থ সংক্রান্ত অনুমোদন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও নিয়োগসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি ও বিশেষ সভাগুলো পরিচালনা করছেন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম।

আচার্যের দপ্তরে তিন সদস্যের প্যানেল পাঠানো হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যারয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিন সদস্যের নির্বাচিত প্যানেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ইত্তেফাক/এসটিএম