শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য উপকূলে জলবায়ু সহনশীল বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে : বিশ্বব্যাংক

আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:০৩

জলবায়ু ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জন ধরে রাখতে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীলতা জোরদারে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এজন্য উপকূলীয় অঞ্চলে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল ‘বাংলাদেশ এনহান্সিং কোস্টাল রেজিলিয়েন্স ইন এ চেঞ্জিং ক্লাইমেট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে ঝুঁকির বিষয়গুলো এবং সরকার কীভাবে এসব ঝুঁকি কমিয়েছে সে বিষয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নানা উদ্যোগকে প্রশংসা করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনে বিশ্বে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কীভাবে জীবন রক্ষা করে, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কমায় এবং উন্নয়ন অর্জন রক্ষা করে। একটি কৌশলগত নীতি কাঠামোর আওতায় মাঠ পর্যায়ে অভিযোজন এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ছাড়াও অবকাঠামো বিনিয়োগে নানা উদ্যোগের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ১০০ গুণ কমিয়েছে। তবে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা, পরিবেশগত অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ুঝুঁকি উপকূলীয় অঞ্চলের বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও অবকাঠামো ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যেখানে প্রায় ৪ কোটি মানুষ বাস করে। সহনশীলতা বাড়াতে বাংলাদেশকে আরও জরুরি কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রিডিরেক্টর ড্যানড্যান চেন বলেন, ‘উপকূলে সহনশীলতা কোনো অপরিবর্তনীয় লক্ষ্য নয়, বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুঁজে বের করা এর লক্ষ্য। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে গত ৫০ বছর ধরে জলবায়ুসহনশীলতা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে সহায়তা করছে। আজ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং জলবায়ুসহনশীলতার উন্নতিতে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, যা অন্যান্য জলবায়ু-ঝুঁকিগ্রস্থ দেশের জন্য অনুপ্রেরণা।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূলে জলবায়ুসহিষ্ণুতায় অধিকতর বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন করবে এবং এক্ষেত্রে এখনই কাজ করতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় সহনশীলতা বাড়াতে রিপোর্টে সাতটি মূল সুপারিশ করা হয়েছে।  

বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং রিপোর্টটির সহ-রচয়িতা স্বর্ণা কাজী বলেন, ‘উচ্চ বিনিয়োগের প্রয়োজনীতা বিবেচনা করে আমরা অতীতের সম্পৃক্ততা থেকে শিখতে পারি এবং উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পেতে পারি। এই রিপোর্টে প্রথম বারের মতো ১৯৬০ সালের পর থেকে এ বিষয়ে সমস্ত বড় প্রকল্পের মূল্যায়ন করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক উপকূল ও জলবায়ুসহনশীলতা তৈরি এবং দুর্যোগে প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত প্রথম পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে ভোলায় মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা প্রকল্প ছিল। বর্তমানে ১৯০ কোটি ডলারের চলমান কার্যক্রমের মধ্যে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রও বাঁধ নির্মাণ, পূর্ব সতর্কীকরণব্যবস্থা, আবহাওয়া সংক্রান্তসেবা এবং বনায়নে সহায়তা রয়েছে।

ইত্তেফাক/ইআ