দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজের প্রার্দুভাবে থামছে না গরুর মৃত্যু। ইতোমধ্যেই ৮টি গরু মারা গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে কমদামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা নিলেই ভালো হবে গরু।
স্থানীয় খামারি শরীফ আলী বলেন, ‘উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এখনই গুরুত্ব না দিলে কৃষক ও খামারিরা সর্বস্বান্ত হবেন।’
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ফেরদৌস আলী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার তিনটি গরু মারা গেছে। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নেয়ামত আলীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়েও ভালো হয়নি। এতে আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির আরও ৫টি গরু কম দামে বিক্রি করে দিয়েছি শনিবার।’ ওই গ্রামের ওসমান আলীর ২টি গরুও মারা গেছে একই রোগে। ঘাটপাড়ায় মারা গেছে ৩টি।
মাদিলাহাট কলেজ এলাকার বাসিন্দা সুলতান হোসেন বলেন, ‘৮০ হাজার টাকা দিয়ে গাই-বাছুর কেনার এক সপ্তাহে একই রোগে বাছুরটি মারা গেছে। খয়েরবাড়ীর বিপদ চন্দ্রের ৮টি গরুর মধ্যে ১টি আক্রান্ত হয়েছে। অন্য গরুগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। মধ্যমপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের ৬টি গরুর মধ্যে ২টি আক্রান্ত, বাগড়া গ্রামের বিথি দাসের ১টি, রাজারামপুর গ্রামের পুর্ণিমা রানীর ৪টি, দাদপুর গ্রামের আজিজুল ইসলামের ১২ টি গরুর মধ্যে ২টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে গত ৮ আগস্ট দাদপুর গ্রামের স্বদেশ মহন্তের ব্রাহামা জাতের ১২০ কেজি ওজনের গরু মারা গেছে। গরুটির চিকিৎসা করেছিলেন ডা. নেয়ামত আলী।’
এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে, আক্রান্ত গরুর শরীর চাকাচাকা হয়ে যায়, লোম উঠে যায়, ক্ষত হয়ে শরীরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পা ফুলে যায়, শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসে। জ্বরের সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ছটফট করতে করতে গরু মারা যায়।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় নিবন্ধিত গাভীর খামার রয়েছে ২৮টি। এতে গাভী রয়েছে ৪৮০টি। ২৮০টি অনিবন্ধিত খামারে গাভী রয়েছে ৩ হাজার ৩৬০টি। গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ নিবন্ধিত ৪টি খামারে গরু রয়েছে ৬০টি। ২৫৭টি অনিবন্ধিত খামারে গরু রয়েছে এক হাজার ২৮৫। কৃষক পর্যায়ে দেশি গরু রয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৬২৩টি এবং শংকর জাতের ৩৭ হাজার ৫৪০টি।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নেয়ামত আলী বলেন, ‘২৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৬১৫টি গরুর বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৮টি গরুর লাম্পি (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত ছিল। রোগের তীব্রতা কম হলে চিকিৎসায় এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে এবং তীব্রতা বেশি হলে এক থেকে দেড় মাসে আক্রান্ত গরু সুস্থ হবে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চিকিৎসা নিলেই ভালো হবে গরু।’