ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট বুধবার বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি থামাতে এক সার্বিক পরিকল্পনা পেশ করেছেন। বাড়তি মুনাফা কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কমাতে চায় ইইউ। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিইয়েছে জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে।
ইউরোপের সাধারণ মানুষ ও ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানগুলির কর্মকর্তাদের মনে আপাতত সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা বেড়ে চলা বিদ্যুতের মাসুল। মাসের শেষে সেই বিল মেটাতে না পারলে পথে বসার ভয় পাচ্ছেন অনেক মানুষ। জাতীয় স্তরে সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে এমন বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু ইউরোপীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের বাজারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এমন সংকট সামাল দেওয়া কঠিন।
এই অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন সক্রিয় হয়ে উঠছে। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তার ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণে এমনই পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে প্রাকৃতিক গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের দামও হুহু করে বেড়ে চলেছে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি এভাবে টিকে থাকলেও বাকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি সেই সুযোগে মোটা মুনাফার মুখ দেখছে। ইইউ সেই সব কোম্পানির অপ্রত্যাশিত মুনাফার উপর ‘উইন্ডফল' কর চাপিয়ে সেই অর্থ দিয়ে ভোক্তাদের ভার লাঘব করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে এই মর্মে এক বহুমুখী আইন অনুমোদন করাতে হলে সদস্য দেশগুলির অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে। এর আওতায় একগুচ্ছ পদক্ষেপের মাধ্যমে আসন্ন শীতের মাসগুলিতে ইউরোপে বিদ্যুতের মূল্য সামর্থ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে।
ইইউ-র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স টিমারমান্স ও জ্বালানি বিষয়ক কমিশনর কাড্রি সিমসন গোটা পরিকল্পনা আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। প্রথমত যে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র কম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, সেগুলির আয়ের ঊর্দ্ধসীমা স্থির করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানিগুলিকে বর্তমান সংকট মোচনে অবদান রাখতে মাসুল দিতে হবে। তৃতীয়ত বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক করা হবে। সিমসন বলেন, সেই বাড়তি রাজস্ব কাজে লাগিয়ে ইইউ সদস্য দেশগুলি এই কঠিন সময়ে সংকটে পড়া মানুষের সহায়তা করতে পারবে। দুটি লেভি চাপিয়ে মোট প্রায় ১৪ হাজার কোটি ইউরোরও বেশি অঙ্ক আদায় করা যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
তবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলি মুনাফার উপর লেভির বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। এর ফলে এ ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগে ক্ষতি হবে বলে তারা আশঙ্কা করছে। তাছাড়া গোটা ক্ষেত্রের পক্ষে আরও মূলধন আকর্ষণ করতে সমস্যা হবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আপাতত সংকটের মোকাবিলা করতে এমন কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়াও ইউরোপের বিদ্যুৎ বাজারেরও আমূল সংস্কার করতে চায় ইউরোপীয় কমিশন। সেই সঙ্গে রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে গ্যাস আমদানির মূল্যেরও ঊর্দ্ধসীমা স্থির করার দাবি জানাচ্ছে বেশ কিছু সদস্য দেশ। তবে এই সব প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করতে আরও সময় লাগবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানির দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের বৈঠকে জরুরি পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের বিষয়ে আরও স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যেতে পারে।