রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উত্তরে নৌকা কিনে খাল পরিষ্কার, দক্ষিণে বাড়ানো হচ্ছে জনসচেতনতা

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:০০

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। এ বছরের ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন কয়েক শ করে রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন ভর্তি রোগী ৩৯৫ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ২৯৪ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাত্ক্ষণিক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির আশপাশের হটস্পটে লার্ভি সাইডিং ও ফগিং করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন দাবি করেছে, তারা লার্ভি সাইডিং ও ফগিং অব্যাহত রেখেছে। তবে এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়, তাই বাসাবাড়ির জমা পানি পরিষ্কারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। নয়তো একা সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাবে।

ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় দুই সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিশেষ অভিযানে নেমেছে। বাসাবাড়িতে জমা পানি পাওয়া গেলে জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতেও প্রচারণা চালাচ্ছে তারা।

উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, খালে প্রচুর পরিমাণ কচুরিপানা জন্মানোর কারণে মশা জন্মায়। এসব মশা মারার জন্য যে ম্যালেরিয়া অয়েল বি ব্যবহার করা হয় তা কচুরিপানার কারণে মশার আঁতুড়ঘরে পৌঁছাতে পারে না। ফলে দমন হয় না মশা। তাই জলাশয়গুলো পরিষ্কার করার জন্য কেনা হয়েছে নৌকা। কচুরিপানা বিনাশে ব্যবহার করা হচ্ছে হার্বিসাইড নামে কীটনাশক।

উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, আমাদের ঢাকা উত্তর সিটির অধীনে প্রচুর খাল, কিছু পরিত্যক্ত ফাঁকা জায়গা ও জলাশয় আছে যেগুলোতে প্রচুর কচুরিপানা জন্মে। যা মশকনিধন কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আমরা এগুলো পরিষ্কার করি, আবার জন্মায়। এগুলোর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের জন্য আমরা ৩০টি নৌকা কিনেছি। আমাদের ১০টি অঞ্চলের প্রত্যেকটির জন্য তিনটি করে নৌকা বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ নৌকাগুলো ফাইবার গ্যাসের তৈরি এবং প্রতিটি নৌকা কিনতে ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘অনেক জায়গা আছে পানি কম। সেখানে নৌকাও যায় না। ঐসব জায়গায় আমরা হার্বিসাইড নামে এক ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করি। ১০ লিটার পানিতে ১২-২০ মিলিলিটার হার্বিসাইড মিশিয়ে স্প্রের সাহায্যে ছিটিয়ে দিলে কচুরিপানা মরে যায়। এর মাধ্যমে আমরা খালের মধ্যে জন্মানো মশা দমন করছি। এছাড়া সকালে লার্ভি সাইডিং ও বিকালে ফগিং অব্যাহত রয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে এর পাশাপাশি নাগরিককেও সচেতন হতে হবে। তাদের বাড়ির মধ্যে জমা পানি ফেলে দিতে হবে।

অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা মানুষকে জনসচেতন করতে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করছি। এছাড়া সকাল ও সন্ধ্যায় লার্ভি সাইডিং ও ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যেটি সিসিটিভির মাধ্যমে লাইভ মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া আমরা ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নিয়েও তাদের বসবাসের এলাকায় কীটনাশক প্রয়োগ করছি। গত বছরের তুলনায় দক্ষিণ সিটিতে এ বছর কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম বলেও তিনি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১০ হাজার ২৩২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৮১ জন। এ সময়ে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৯৫ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ১০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, এ নিয়ে আগেই পূর্বাভাস ছিল। বৃষ্টিপাত বিবেচনা ও মশার লার্ভার ঘনত্ব অনুযায়ী ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেমন হবে সেটি আমরা বলি। আশঙ্কা অনুযায়ী সেটিই হয়েছে। এখন হট ম্যানেজমেন্টে জোর দিতে হবে। বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে হচ্ছে। তবুও হট স্পটে গুরুত্ব দিতে হবে এখন। নয়তো ডেঙ্গু জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়বে।

এদিকে গতকাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, এডিস বা ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকলেও ২০২০, ২১ ও ২২ সাল এই তিন বছর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি।

ইত্তেফাক/এএইচপি