বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইউরোপ দিয়ে মন্দার শুরু

মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:২০

ইউরোপের দেশগুলো দিয়ে অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়েছে। করোনার ভয়াবহ ছোবল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই অঞ্চলের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। রাশিয়া কর্তৃক সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ইউরো জোনে জ্বালানিসংকট প্রকট হয়েছে। শিল্প উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক লোক বেকারত্ব বরণ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ইউরোপের দেশগুলোতে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় সাত মাস অতিক্রম করতে চলল। ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রার মান মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এই প্রথম ইউরোর মান ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ইউরোপের ২৭টি দেশের মধ্য ১৯টি দেশই অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ব্যবহার করে থাকে। ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতি ৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ইউরোপ থেকেই শুরু হয়েছে।

ইউরোপের অর্থনীতি তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এগুলো হচ্ছে—এনার্জি স্বল্পতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কোনো কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপের অন্য দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর কারণে রাশিয়া দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে দেশগুলো গ্যাসের সমস্যায় ভুগছে। জানা গেছে, ইউরোপের ১২টি দেশ এখন জ্বালানি স্বল্পতায় ভুগছে। এসব দেশের কোনো কোনোটিতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কিংবা কোনো কোনো দেশে আংশিক সরবরাহ করছে। কিন্তু অন্য দেশগুলোতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকে বিশ্লেষকরা বোকার কাজ বলে মন্তব্য করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর তথ্য মতে, তিনটি দেশ এখন খুব বাজে অবস্থায় আছে। এগুলো হচ্ছে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং চেক রিপাবলিক—এই তিনটি দেশে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি। দেশটির চাহিদার অর্ধেক জ্বালানি সরবরাহ করত রাশিয়া। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে দেশটি ২২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী দুই বছরের মধ্যে হারাবে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইউরোপের অর্থনীতির বিপদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মূল্যস্ফীতির এই হার ১০ শতাংশের ওপরে; যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যেসব দেশ ইউরো ব্যবহার করে সেগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। এস্তনিয়ার মূল্যস্ফীতি ২৩ শতাংশের ওপরে। লাটভিয়া, লিথুনিয়ার মূল্যস্ফীতি ২১ শতাংশ। পুরো ইউরোপ জুড়ে এখন খাদ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া এনার্জিও দাম  বেড়েছে ৪০ শতাংশ, শিল্পজাত পণ্যেও দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে। এ অবস্থা মোকাবিলা করতে গিয়ে কোনো কোনো দেশের সরকার বিপদে পড়েছে। এক্ষেত্রে ইতালির কথা উল্লেখযোগ্য। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী একটি প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের শরিকদের এটি পছন্দ হয়নি। তারা সমর্থনও তুলে নেয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘিকে পদত্যাগ করতে হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরো জোনে যে হারে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে তাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা অবশ্যম্ভাবী। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। ব্রিটেনের অবস্থাও ভয়াবহ। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ৫০ বছরের মধ্যে এটি হবে সর্বোচ্চ। ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এ অবস্থার জন্য জ্বালানি স্বল্পতাকে দায়ী করেছে। গর্নও এন্ড্রু ভ্যালি বলেছেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সংকুচিত হচ্ছে। আমরা মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’ এ পরিস্থিতিতে বেতন বাড়ানোর জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলো ৩০ বছর পর আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপের অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বে।

ইত্তেফাক/এসটিএম