প্রতি বছরের ভাদ্র মাসের একাদশীতে নেচে-গেয়ে কারাম উৎসব পালন করে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা। বিপদ থেকে মুক্তি, অতিবন্যা ও খরা থেকে বাঁচতে দেশ ও মানুষের মঙ্গল কামনায় ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক উৎসবটি পালন করা হয়। কারাম বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে ঢাকের তালে নিজস্ব সংস্কৃতির রেশে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা নেচে গেয়ে উৎসবে মেতে উঠেন। সন্ধ্যার প্রথম প্রহরে গান-বাজনার মাধ্যমে কারাম গাছ নিয়ে এসে যথাস্থানে বসান তারা।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলার সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নে পাচপীরডাঙ্গা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামে ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসবটি পালন করা হয়। উৎসবটি দেখার জন্য ওরাওঁ (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমবেত হন।
স্থানীয় তরুণ সোহেল লাখরা বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এ উৎসব পালন করে থাকি। এ উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করি। আমাদের নিজের বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনায় আমরা এ কারাম পূজাটি করে থাকি। আমরা মনে করি এ পূজার মাধ্যমে আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে।’
সুশীলা লাখরা বলেন, ‘এটি আমাদের সবচেয়ে বড় একটি উৎসব। এই উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করে থাকি। আমাদের সবার বাড়িতে মেহমান আসছে। আমরা অনেক আনন্দ করি। নেচে-গেয়ে কারাম পূজা পালন করে আমরা বিপদ মুক্তি কামনা করি। এর মাধ্যমে আমাদের বিপদ-আপদ দূর হবে আর দেশের মানুষের মঙ্গল হবে।’
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর এ ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক দিবসটি পালন করে এখনকার ওরাওঁ সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। তারা এখানে কারাম গাছের ডালকে তাদের রক্ষাকবজ মনে করেন। তারা মনে করেন এ গাছটির মাধ্যমে তারা তাদের জীবন রক্ষা করেন। সেজন্য প্রতিবছর তারা এ উৎসবটি পালন করেন। আজকে সারারাত তারা নানা সংস্কৃতি পালন করে আগামীকাল তারা কারাম গাছটি ভাসিয়ে দেবেন।’
কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেরকেটা বলেন, ‘আদি সময় থেকে যারা আমরা ওরাওঁ আদিবাসী, তারা এ কারাম পূজাটি পালন করে আসছি। এ কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে আমরা মনে করি আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। আর এ পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। এখানে ২০০৩ সাল থেকে আমরা এ কারাম উৎসবটি পালন করে আসছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এ আয়োজনকে আরও ভালো করে করার। কারণ এটি আমাদের বড় একটি ধর্মীয় উৎসব। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আমরা ভালোভাবে এ উৎসবটি পালন করতে পারবো।’
কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব নিয়ে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারাম পূজাটি ঐতিহ্যবাহী বড় একটি উৎসব। প্রতি বছরে তারা নানা আয়োজনে এ উৎসবটি পালন করে থাকেন। তাদের সব আয়োজনে জেলা প্রশাসন সঙ্গে ছিল, এরপরেও তাদের সব আয়োজনে আমরা পাশে থাকবো।’