সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

মঙ্গল কামনায় আদিবাসীদের কারাম উৎসব 

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২৩

প্রতি বছরের ভাদ্র মাসের একাদশীতে নেচে-গেয়ে কারাম উৎসব পালন করে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা। বিপদ থেকে মুক্তি, অতিবন্যা ও খরা থেকে বাঁচতে দেশ ও মানুষের মঙ্গল কামনায় ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক উৎসবটি পালন করা হয়। কারাম বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে ঢাকের তালে নিজস্ব সংস্কৃতির রেশে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা নেচে গেয়ে উৎসবে মেতে উঠেন। সন্ধ্যার প্রথম প্রহরে গান-বাজনার মাধ্যমে কারাম গাছ নিয়ে এসে যথাস্থানে বসান তারা।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলার সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নে পাচপীরডাঙ্গা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামে ঐতিহ্যবাহী কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসবটি পালন করা হয়। উৎসবটি দেখার জন্য ওরাওঁ (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমবেত হন।

স্থানীয় তরুণ সোহেল লাখরা বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এ উৎসব পালন করে থাকি। এ উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করি। আমাদের নিজের বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনায় আমরা এ কারাম পূজাটি করে থাকি। আমরা মনে করি এ পূজার মাধ্যমে আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে।’

সুশীলা লাখরা বলেন, ‘এটি আমাদের সবচেয়ে বড় একটি উৎসব। এই উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করে থাকি। আমাদের সবার বাড়িতে মেহমান আসছে। আমরা অনেক আনন্দ করি। নেচে-গেয়ে কারাম পূজা পালন করে আমরা বিপদ মুক্তি কামনা করি। এর মাধ্যমে আমাদের বিপদ-আপদ দূর হবে আর দেশের মানুষের মঙ্গল হবে।’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর এ ঐতিহ্যবাহী ও সামাজিক দিবসটি পালন করে এখনকার ওরাওঁ সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। তারা এখানে কারাম গাছের ডালকে তাদের রক্ষাকবজ মনে করেন। তারা মনে করেন এ গাছটির মাধ্যমে তারা তাদের জীবন রক্ষা করেন। সেজন্য প্রতিবছর তারা এ উৎসবটি পালন করেন। আজকে সারারাত তারা নানা সংস্কৃতি পালন করে আগামীকাল তারা কারাম গাছটি ভাসিয়ে দেবেন।’

নেচে-গেয়ে কারাম উৎসব পালন

কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেরকেটা বলেন, ‘আদি সময় থেকে যারা আমরা ওরাওঁ আদিবাসী, তারা এ কারাম পূজাটি পালন করে আসছি। এ কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে আমরা মনে করি আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। আর এ পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। এখানে ২০০৩ সাল থেকে আমরা এ কারাম উৎসবটি পালন করে আসছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এ আয়োজনকে আরও ভালো করে করার। কারণ এটি আমাদের বড় একটি ধর্মীয় উৎসব। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আমরা ভালোভাবে এ উৎসবটি পালন করতে পারবো।’

কারাম পূজা ও সামাজিক উৎসব নিয়ে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারাম পূজাটি ঐতিহ্যবাহী বড় একটি উৎসব। প্রতি বছরে তারা নানা আয়োজনে এ উৎসবটি পালন করে থাকেন। তাদের সব আয়োজনে জেলা প্রশাসন সঙ্গে ছিল, এরপরেও তাদের সব আয়োজনে আমরা পাশে থাকবো।’ 

 

ইত্তেফাক/এইচএম