সরকার নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অফিস করছেন না উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিস টাইম হলেও তা কোনোভাবেই যেন মানছেন না তারা।
সরেজমিনে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পৌনে ৯টা পর্যন্ত সাবরেজিস্ট্রারের কক্ষে (খাসকামরা) তালা ঝুলছে। তালা ঝুলানো এজলাস কক্ষেও। এজলাস কক্ষের অফিস সহায়ক দিলীপ কুমার পাল অফিসে আসেন ৮টা ৩৪ মিনিটে। তিনি বলেন, ‘পথে দেরি হয়েছে আসতে। এখনো পর্যন্ত আমি ছাড়া সাবরেজিস্ট্রার স্যারসহ অন্যদের কেউই তো আসেনি।’
এরপর ৮টা ৪১ মিনিটে এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন অফিস সহকারী নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, ‘পথে দেরি হওয়ায় অফিসে ঢুকতে দেরি হয়েছে। এখনো পর্যন্ত আমি আর অফিস সহায়ক আমরা দুইজনই এসেছি। আমাদের এ কক্ষের অপর দুই মোহরার ও একজন টিসি মোহরার তারাও আসেননি এখনো, সাবরেজিস্ট্রার স্যারও দেখছি আসেননি।’
তারপর পৌনে ৯টার পরপরই অফিসে আসেন সাবরেজিস্ট্রার মো. জুবায়ের হোসেন। উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার দপ্তরের ভুক্তভোগী দলিল দাতা-গ্রহীতাসহ হয়রানির শিকার সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার মো. জুবায়ের হোসেন নিয়ম না মেনে অফিসে যাওয়া-আসা করে থাকেন। তাই অন্য স্টাফরাও আসেন তাদের খেয়ালখুশি মতো।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে সাবরেজিস্ট্রার কখনো কখনো অফিসে আসেন ৯টা, ১১টা ও ১২টায়ও। এ ছাড়া, সপ্তাহে ৫ দিন অফিস করার নিয়ম থাকলেও তিনি অফিস করে থাকেন তিনদিন। তবে তিনি কৌশলে হাজিরা দেখিয়ে থাকেন ৫ দিনেরই। তারপরও যে সময়টুকু অফিস করেন তিনি, সেই সময়েও সেবা নিতে আসা লোকজনকে বসিয়ে রেখে হঠাৎ বাইরে চলে যান। অফিস টাইমে তার দপ্তরে আসা দলিল দাতা ও গ্রহীতাদের কাজ না করে বসিয়ে রেখে চলে যান মাছ ধরতে।
এ ছাড়া, গ্রাহকদের নানা অজুহাতে ঘুরিয়ে হয়রানির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কোনো গ্রাহক কথা বললে তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন তিনি। সেইসঙ্গে সেবাগ্রহীতারদের সঙ্গে তার রয়েছে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। এ ছাড়া সম্প্রতি একটি কোম্পানির অনুকূলে একটি জাল দলিল রেজিস্ট্রি করে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েন তিনি। এনিয়ে আদালতে মামলাও হয়। এছাড়া দলিল রেজিস্ট্রির রাজস্বের হিসাব-নিকাশ জটিলতাসহ অন্যান্য কারণে তাকে গত সপ্তাহে শোকজও করেছেন জেলা সাবরেজিস্ট্রার।
সরকারের নিয়ম মেনে সময়মতো অফিসে না আসার বিষয়ে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমি অসুস্থ, তাই দেরি হয়। আমি নিয়ম অনুযায়ী অফিস করে থাকি।’ আর তাকে শোকজসহ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওসব মিথ্যা।’