বয়স মাত্র একটি সংখ্যা। আর মানুষ চেষ্টা করলে সে সবই করতে পারে। গাজীপুরের ৫৪ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ করে সেটাই প্রমাণ করে দেখালেন বেলায়েত শেখ। রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন বেলায়েত শেখ। দুপুর ২টায় ফলাফল প্রকাশিত হলে ৬৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেলায়েত শেখ নিজেই। বরেন্দ্র বেলায়েত তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ, রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছি। মায়ের অনুমতি পেলেই ভর্তি হবো ইনশাল্লাহ।’
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কৃতকার্য হলেও ভর্তি নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ভর্তি ফি থেকে শুরু করে সেশন ফি অনেক বেশি হওয়ায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক টাকা-পয়সার প্রয়োজন। কিন্তু আমার এত টাকা-পয়সা নেই। ভর্তি ফি থেকে শুরু করে সেশন ফি পর্যন্ত আমাকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। এখন তারা অনুমোদন দিলেই ভর্তি হব।’
বেলায়েত শেখ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুনজরই পারে আমার স্বপ্নকে পূরণ করতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়াও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমার পাশে দাঁড়ায় আমি উপকৃত হব। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।’
জানা যায়, সংসারের অসচ্ছলতা, দরিদ্রতা আর অসুস্থ বাবা-মায়ের কারণে ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া বেলায়েত ১৯৮৩ সালে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়েন। কিন্তু উচ্চশিক্ষা লাভের অদম্য আগ্রহ মনের ভেতরে পুষে রাখেন তিনি। এরই মধ্যে বেলায়েত বিয়ে করেন এবং দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তানের বাবা হন। সন্তানদের বিয়েও দিয়েছেন।
তবে অনটনের সংসারের যাঁতাকলেও তার উচ্চশিক্ষা লাভের আগ্রহ ধীরে ধীরে প্রবল হতে থাকে। অবশেষে সুযোগ আসে স্বপ্ন পূরণের। এ বছর বেলায়েত ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি-ভোকেশনাল) জিপিএ ৪.৪৩ নিয়ে পাস করেন। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে মাধ্যমিক সমমান দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির ছেলে বেলায়েত শেখ। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শ্রীপুরের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।