সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের নারীদের শিরোপা জয়ে পুরো দেশ উচ্ছ্বসিত। আনন্দের জোয়ার সারা দেশে। কিন্তু এ বিজয় এক দিনেই অর্জিত হয়নি। এর পেছনে ছিল অনেকের পরিশ্রম ও মেধা। তবে একটি নাম এখন খুব জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছে। তিনি হলেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি নারী, একাধারে যিনি ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এফসি) সদস্য এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও সদস্য। বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানও তিনি।
গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের যে নারী দলটি শিরোপা জিতেছে, তাদের দেখভালের দায়িত্বও ছিল মাহফুজা আক্তার কিরণের। ঢাকা থেকে তার সঙ্গে কাঠমান্ডুতে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন। এই দল আরো পরিপূর্ণ হলে বাংলাদেশ নারী ফুটবলে এশিয়া অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হবে। হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয়, আমরা বিশ্বকাপ পর্যায়েও পৌঁছাতে পারব।’
শুরুটা হয়েছিল ২০০৮ সাল থেকে। তখন থেকে বাংলাদেশের নারী ফুটবল আলোচনায় আসতে থাকে। ২০১২ সালে এসে বাংলাদেশের নারী ফুটবল আরো পরিণত হয়। ২০১৮ সালে নেপালে সাফ ফুটবলে মেয়েরা অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতলে প্রথম ফল পায় বাংলাদেশ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। কঠোর অনুশীলন ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থেকে নেপাল জয় করতে যান নারী ফুটবলাররা। ফলাফল আসে হাতেনাতে।
বাফুফের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, সবকিছু সম্ভব হয়েছে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে অভিজ্ঞতাকে মাহফুজা আক্তার কিরণ কাজে লাগিয়েছেন। বাফুফের সভাপতির কাছ থেকেও তিনি উত্সাহ পেয়েছেন। তবে কাজের কাজ হয়েছে ২০১৮ সালে। সেবার মেয়েরা অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ডেকে পুরস্কৃত করেন। এ থেকে ব্যাপক উত্সাহ পান তারা। আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক আরো বলেন, নারী ফুটবল দল এক ছাদের নিচে থেকে কঠোর অনুশীলন করেছে। বাফুফের শেখ কামাল জিমনেসিয়ামে শরীরচর্চা তাদের ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করেছে। একত্রে থাকার কারণে তাদের মধ্যে বোঝাপড়াও ছিল ভালো। এ অবস্থা চললে নারীরা ভবিষ্যতে দেশের জন্য আরো ভালো ফলাফল নিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে মাহফুজা আক্তার কিরণ ইত্তেফাককে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘একটা লম্বা জার্নির মধ্য দিয়ে নারী ফুটবল দল এই পর্যায়ে এসেছে। আমরা হারিয়ে যেতে চাই না। এর প্রমাণ, দল ধারাবাহিকভাবেই ভালো করছে। এই মেয়েদের দিয়ে আমরা একটি বিশ্বমানের জাতীয় দল গঠন করতে পারব।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের সদস্যরা বিদেশি লিগে খেলছেন। ভবিষ্যতে বিভিন্ন লিগে আরো কয়েকজন নারী ফুটবলার খেলবেন। নারী ফুটবল দলের সদস্যদের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে কিরণ বলেন, তারা প্রতি মাসেই বেতন পাচ্ছেন। ভালো কোচ আছে তাদের। টিম স্পিরিটিও চমৎকার। এখন অপেক্ষা শুধু সুন্দর ভবিষ্যতের।