সড়কের ওপরে একসময় ছিলো সারি সারি ট্রাক আর কাভার্ড ভ্যান। দখল হয়ে গিয়েছিলো সাতরাস্তার মোড় থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়ক। উত্তর সিটির সাবেক প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক চালক ও শ্রমিকদের তোপের মুখে নাগরিকদের জন্য দখলমুক্ত করেছিলেন সেই সড়ক। উত্তর সিটি করপোরেশন ২০১৮ সালের আনিসুল হকের নামে সেই সড়কের নামকরণ করলেও দখলমুক্ত রাখতে পারেননি সড়কটি। সড়কের ওপর আবারও পাকিং করা হচ্ছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান। এতে যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে লাইন দেওয়া সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ রাখা। ভেতর দিয়ে কোনো মতে একটি গাড়ি চলাচলের জায়গাটুকু ফাঁকা আছে। সেদিক দিয়েই রাস্তার গাড়িগুলো কোনোমতে চলাচল করছে। পথচারীদের হাঁটারও কোনো জায়গা নেই। বড় ট্রাকের কারণে ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে। সড়কের মধ্যে রাখা গাড়ি মেরামতের কাজও সেখানেই সারছেন ট্রাক শ্রমিকরা। মদিনা মসজিদের পাশে ট্রাকের সংখ্যা বেশি। তবে একদম রেললাইন থেকে সাত রাস্তা পর্যন্ত পুরো সড়কেই রয়েছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান।
এছাড়া সড়কের মধ্যে এখন বিভিন্ন অফিসের বাস ও ব্যাক্তমালিকানা বাসও রাখতে দেখা গেছে সড়কে। এসব গাড়ি বিভিন্ন পরিবহন এজেন্সি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকাধীন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ রয়েছে। গাড়ির চালকরা জানান, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় এখানে পার্কিং করার কারণে চাঁদাও নেওয়া হয়। তারা বাধ্য হয়ে টাকাও দেন বলেও জানান।
বর্তমানে প্রায় ১০০ ফুট প্রশস্ত আনিসুল হক সড়ক দিয়ে রেলগেট-সাতরাস্তা সড়ক ধরে ফার্মগেট ও কাওরান বাজার এলাকা থেকে তেজগাঁও মহাখালী ও বনানীর দিকে যাওয়া যায়। গুলশান-নিকেতনে যাওয়ার সহজ রাস্তাও এটি। এই রাস্তা ব্যবহার করে তেজগাঁও এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিক্যাল কলেজ, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটসহ সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে লোকজন যাতায়াত করে। এ ছাড়া সড়কটি ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পথ এটি। এভাবে অবৈধভাবে গাড়ি পাকিং করে রাখার কারণে সরু হয়ে গেছে সড়ক। এখন ৫ মিনিটের এই সড়ক পার হতে কখনো আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে।
এই পথে যাতায়াতকারীরা জানান, রাত যত বাড়ে ট্রাকের সংখ্যা তত বাড়তে থাকে। সড়কের ওপর এমন ট্রাক রাখায় সড়কটি রাতের বেলা ভুতুরে হয়ে উঠে। এতে চুরি ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম ঘটছে প্রায়ই।
অন্যদিকে ফার্মগেট থেকে রেললাইন ও কাওরান বাজার আসতে সংযোগ সড়কের অবস্থাও দীর্ঘদিন যাবত বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে এই সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত, জমছে পানি, উঠে গেছে পিচ ঢালাই। এপথে চলতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাতায়াতকারীদের।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেঁজগাওয়ের এই ট্রাক পার্কিং করা সড়কটি দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকদের প্রচণ্ড ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন সাবেক মেয়র আনিসুল হক। উদ্ধারের পর সংস্কার করে তিনি রাস্তাটির চেহারা বদলে দেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে আবার সেই আগের রূপে ফিরে গেছে সড়কটি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম কয়েকবার এই সড়ক পরিদর্শন করলেও এর কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
সর্বশেষ তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এটি পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, ‘ সড়কের পাশে যে জমি আছে সেটি রেলওয়ের জায়গা, সিটি করপোরেশনের নয়। রেলওয়েকে চিঠি লিখে বলব, ২১ বিঘা যে জমি যেটা আছে, সেটি আমাদেরকে দিয়ে দেওয়ার জন্য। তাহলে আমরা একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে এ জায়গাটাতে আন্ডারগ্রাউন্ডে এবং উপরে মাল্টি পার্কিংয়ের একটা বন্দোবস্ত করতে পারি। অর্থাৎ আমরা একটা সাসটেইনেবল ডিসিপ্লিন্ড ওয়েতে যাব। তেজগাঁওয়ে বর্তমানে যে জমির উপর বেশিরভাগ ট্রাক রয়েছে সেটি রেলওয়ের জায়গা। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের কাছে উত্তর সিটি করপোরেশন টার্মিনাল তৈরির জন্য যে জায়গা চেয়েছেন, সেটি রেলওয়ে দিতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ইত্তেফাককে বলেন, রেলওয়ে আমাদের নিষেধ করে দিয়েছেন। তবে আমরা তেজগাঁওয়ে বিটিসিএলের কাছে জায়গার জন্য আবেদন করেছি। তারা আমাদের জায়গা দিলে আমরা সেখানে ট্রাকস্ট্যান্ড করে দিব। এতে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের জায়গা করে দিলে আমরা এখান থেকে সব কিছু সরিয়ে ফেলবো। আসলে আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তাই এখানে ট্রাক রাখতে হয়। এছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের ফাইনাল কিছু জানানো হয়নি।