শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃত বেড়ে ৫৯

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৯

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়াঘাটে নৌকা ডুবিতে তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চলছে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে তিন দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৯ জনে। আজকের ৯ মৃতদেহের এখনো পরিচয় মেলেনি।  

এর আগে পঞ্চগড় জেলার করতোয়া নদী ও দিনাজপুর জেলার আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার সারাদিনে ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়। আর নিখোঁজের সংখ্যা ৪০ জনে নেমে এসেছে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে স্থাপিত জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রে (কন্ট্রোল রুম) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিপংকর রায় রাতে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে উপরোক্ত তথ্য দিয়েছেন। 

এসময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনে উদ্ধারকৃত মৃতদেহের মধ্যে ২৫ জন নারী, ১৩ জন শিশু ও ১২ জন পুরুষ রয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা এসব মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। এদের মধ্যে ৭ জনের মৃতদেহ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের নাম হচ্ছে-হাতেম আলী (৭০) শ্যামলী রানি (১৪), লক্ষী রানি (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫) শোভা রানি (২৭), দিপঙ্কর (৩) পিয়ন্ত (২.৫) রুপাালি ওরোফে খুকি রানি (৩৫), প্রমিলা রানি (৫৫) অনবালা (৬০) সুনিতা রানি (৬০), ফাল্গুনী (৪৫) প্রমিলা দেবী (৭০), জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানি (২৫), বিষ্ণু (৩), সফলতা রানি (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানি ওরফে শিমুলি (৩৫), উশোশি (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫)। 

আরও হলেন- ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী (৫০), কনিকা রানী (৪০), সূমিত্রা রানী (৪৫), আদরী (৫০), পূষ্পা রানী (৫০), প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রূপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০) এবং পারুল রানী (৩২) ও প্রতিমা রানী (৩৯)। উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিনে ২৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এরা হচ্ছে- ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), কবিতা রানী (৫০), সুচিত্রা রানী (২২), দীপ বাবু (১০), ঝর্ণা বালা (৫০), বেজ্যেবালা (৫০) ও দীপশিখা রানী (১০), জগদীশ চন্দ্র (৬০), সুব্রত (২), যতি মিত্র রায় (১৫), গেন্দা রানী (৫০), কনিকা রানী (৪০), সুমিত্রা রানী (৪৫), আদরী রানী (৫০) পুষ্পা রানী (৫০)। 

আরও রয়েছে প্রতিমা রানী (৫০) এবং সূর্যি নাথ বর্মণ (১২), পলি রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৫), প্রিয়ান্তা রানী (৫), খুকি রানী (৩৫), প্রলিমা রানী (৫৫), তারা রানী (২৪), শোনেকা রানী (৬০), ফাল্গুনি রানী (৫৫), প্রমিলা রানী (৭০), ধনবালা (৪৭), সুমিত্রা রানী (৫৭), সফলতা রানী (৪০), শিমলা রানী (৩৫), নৌকার মাঝি হাসান আলী (৫২), উশোষী রানী (২), তনুশ্রি রানী (২), শ্রেয়শী রানী (২), বিমল চন্দ্র (৪৫), শ্যামলি রানী (৩৫), জোতিষ চন্দ্র (৫৫) ও রূপালি রানী (৩৫)। 
 
কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানান, রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে বের করতে ভোর থেকেই করতোয়ার দুপাড়ে মানুষ আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গোটা এলাকায় মানুষের ঢল নামে। তবে বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখতে আসা মানুষের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। 

ডুবুরি দলের উদ্ধার অভিযানে আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতায় স্থানীয় মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। একপর্যায়ে নিখোঁজদের উদ্ধারে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নদীতে নেমে পড়েন। তারা নদীতে মানববর্ম (মানববন্ধনের মতো করে) নদীতে নেমে লাশ খুঁজতে থাকেন। অনেকে লাঠি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় নদীর এপার থেকে ওপার খোঁজাখুজি শুরু করে। দুপুরের পর থেকে একে একে বিভিন্ন এলাকায় লাশ ভেসে উঠতে থাকে। একেকটা লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে শত শত মানুষ পরিচয় খুঁতে সেখানে ভিড় করে। 

এদিকে, দুর্ঘটনার পর পরই পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম শামীম জানান, অধিকাংশ মানুষের মৃতদেহ সৎকার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। 

তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায় বলেন, ‌‘আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করতে পারবো। ইজারাদারের অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। তবে আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’ 

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত, আহতসহ সব ব্যক্তিকেই আমরা বিভিন্নভাবে সেবা ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইত্তেফাক/এইচএম