রাজধানীর মিরপুর সেকশন-১১ এর প্যারিস রোডে উন্মুক্ত ৭০ কাঠা জায়গা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জায়গাটি প্লট হিসেবে বরাদ্দ দিলেও সেখানে এখন মাঠ করার দাবিতে আন্দোলন করছে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে এলাকাবাসী। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি তাদের অধিগ্রহণ করা জায়গা। এটি কখনো মাঠ ছিল না। তারা নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়েছে। অন্য দিকে কাউন্সিলর বলছেন, এটি খেলার মাঠ ছিল।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, জায়গাটি ১৯৬০ সালের দিকে অধিগ্রহণ করা হয়। এর পরে এটি বস্তি হিসেবে ছিল। পরে ১৯৯৬ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জায়গাটি ৩২ জনকে আবাসিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এখানে মালিকরা বাড়ি করতে গেলে বস্তিবাসী মামলা করেন। পরে মামলায় প্লট মালিকরা ২০১৭ সালে জয় লাভ করে আদালতের আদেশে বস্তি উচ্ছেদ হলেও তারা সেখানে বাড়ি করতে পারেননি। প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তরা বলছেন, বস্তি উচ্ছেদের পর এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। এখনো ময়লা-আবর্জনা রয়েছে। এটি শুরু থেকে কখনো মাঠ ছিল না। হঠাৎ করেই এটি এখন মাঠ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত একজন ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা এ জায়গাটির জন্য বহু বছর ধরে খাজনা দিয়ে আসছি। বরাদ্দ পাওয়ার পর অনেকবার আমরা এখানে বাড়ি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বস্তিবাসী আমাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করার কারণে আমরা এখানে যেতে পারিনি। ২০০২ সালে আমাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সেই রিটে আমরা ২০১৭ সালে জয় লাভ করি। কিন্তু এর পরেও বার বার আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে এখানে ঘর করতে।
জায়গাটি একসময় কালার বস্তি নামে পরিচিত ছিল। যে ব্যক্তির নামে এই বস্তি ছিল তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম কালা। তিনি বলেন, আমারও এখানে কয়েকটি বস্তি ঘর ছিল। তবে ১৭ সালে এসে এখানে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। এর পর থেকে এটি উন্মুক্ত জায়গা।
অন্য দিকে গত কয়েক দিন ধরে মাঠ ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করছে শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় কাউন্সিলর গাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বে এ বস্তিতে মাঠের দাবিতে গতকালও প্রায় ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকার মানুষ বিক্ষোভ করে। এসময় অনেককে মাঠের দাবিতে গণ-অনশনে বসতে দেখা গেছে। পরে মেয়র আতিকুল ইসলাম প্যারিস রোডে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় এই প্যারিস রোড মাঠে খেলেছেন। এই এলাকার অনেক বয়স্ক মানুষ জানিয়েছেন, তারা শৈশবে এই মাঠে খেলেছেন। ড্যাপের নকশায় এটিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখানো আছে। অথচ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এই মাঠকে প্লট আকারে বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। এই উন্মুক্ত স্থানটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ডিএনসিসিকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা একটি আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ করব। মানুষের হাঁটার জন্য মাঠের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করব।’
এ বিষয়ে কাউন্সিলর গাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, এটি অনেক আগে থেকেই মাঠ ছিল। আমিসহ অনেকেই এ মাঠে খেলেছি।
এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুর গৃহসংস্থান বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার মোর্শেদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘এটি কখনো মাঠ ছিল না। কাগজপত্র অনুযায়ী এটি আমাদের বরাদ্দকৃত জায়গা। চাইলেই তো এ বরাদ্দ বাতিল করা যায় না। কাগজপত্র অনুযায়ী বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত তারা। মানবিক বিষয়ও তো এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’