'মোর দুর-ভাগ্য কপাল বাহে!। টাকার অভাবে পূজার দিনেও নাতিটাও একটা নতুন কাপড় দিতে পাড়ং নাই। এতিম নাতিটার কেউ নেই। মুই মরলে নাতিটার যে কি হবে বাহে!' এভাবে আকুতি প্রকাশ করেন কুড়িগ্রামের ফুলপুরের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা অম্বিকা বর্মনী।
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। এই উৎসবকে ঘিরে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রতিটি পরিবারে চলে উৎসবের আমেজ। কিন্তু নতুন পোশাক তো দূরের কথা বাজারও করতে পারেননি ফুলবাড়ির একটি পরিবার। চারিদিকে আনন্দ উৎসবের আমেজ চললেও পূজায় নতুন কাপড় কিনতে না পাড়ায় চরম হতাশা প্রকাশ করেন ৭৫ বছরের অম্বিকা বর্মনী ও তার নাতি অর্জন চন্দ্র রায়।
অম্বিকা বর্মনীর বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুরুষাফেরুষা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত শিতিষ চন্দ্র বর্মনের স্ত্রী। স্ত্রী অম্বিকা ও একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে অশোককে রেখে স্বামী শিতিষ চন্দ্র বর্মন ১৫ বছর আগে মারা যান। সংসারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে অম্বিকা বর্মনীর শুরু হয় দুর্বিষহ জীবন। ভিক্ষাবৃত্তি করে ছেলেকে বড় করে তোলেন।
এখানেই শেষ নয়। তারপর সেই প্রতিবন্ধী ছেলেকে বংশের বাতি জ্বালানোর তাগিদে বিয়েও দেন অম্বিকা। কিন্তু ভাগ্যের কাছে হার মানেন তার ছেলে। পাঁচ বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার বাঁচাতে পারেনি তাকে। কিন্তু তার স্বপ্ন মরে না। ছেলে অশোক মারা গেলেও রেখে যান ৬ বছর বয়সী নাতি অর্জন। অশোককে হারালেও বৃদ্ধ অম্বিকা যেন সত্যিই অর্জন করে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই নাতিকে।
ছেলে মৃত্যুর পর শুরু হয় আরও করুণ পরিণতি। কীভাবে ছেলের বউ ও তার সন্তানসহ ৩ সদস্যের সংসার চলবে? এ দুশ্চিন্তায় যেন শেষ নেই। এদিকে অম্বিকার জীবনে ঘটে যায় আরেক ট্রাজেডি। ১ বছরের মধ্যে ছেলের বউ অবুঝ শিশু রেখে বিয়ে করে বেছে নেন আরেক নতুন সংসার। এ যেন 'অভাগা যে দিকে তাকায় সাগর শুকিয়ে যায়' অবস্থা।
এখন বৃদ্ধা বয়সে অম্বিকা বর্মনী ভিক্ষাবৃত্তি করেন। অবুঝ শিশু নাতিকে নিয়ে স্বামীর ভিটায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের সম্বল বলতে স্বামীর ৪ শতক জমি। এ ছাড়া আর কিছুই নেই। সেই জমিতে জরাজীর্ণ একটি ঘরে অতিকষ্টে টিকে আছেন।
এদিকে অম্বিকা বর্মনীর একমাত্র আয় বয়স্ক ভাতার ৫০০ টাকা। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের এই আগুন বাজারে এ টাকায় কেমনে চলবে দুটি পেট? আবার বয়সের ভাঁড়ে প্রতিদিন ভিক্ষাও করতে পারেন না। কোনো দিন
১ কেজি চাল তো অন্যদিন দেড় কেজি। ভিক্ষা ও ভাতার টাকায় কোন রকমে একবেলা দু-মুঠো খেয়ে কোনো রকমভাবে বেঁচে আছেন। এসব করুণ জীবনের গল্প শোনার আজ যেন কেউ নেই।
অম্বিকা বর্মনী বলেন, মোর দুর-ভাগ্য কপাল বাহে!। ধার-দেন করে হলেও নাতিটাকে স্কুলে দিছং বাহে! টাকার অভাবে পূজার দিনেও নাতিটাও একটা নতুন কাপড় দিতে পাড়ং নাই। এতিম নাতিটার কেউ নেই। মুই মরলে নাতিটার যে কি হবে বাহে! তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সরকারি পাকা ঘরের প্রত্যাশা করেন অম্বিকা বর্মনী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বাবু জানান, তিনি সরকারি পাকা ঘর পাওয়ার যোগ্য। তিনি খুব কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আমি চেষ্টা করব তিনি যেন একটা সরকারি পাকা ঘর পান।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, তার পরিবারের পক্ষ থেকে যোগযোগ করলে আমরা সামনের অর্থ বছরে সরকারি পাকা ঘরের বরাদ্দ আসলে তাকে পাকা ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করব।