ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদন করা কাশির সিরাপ খাওয়ার পর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় ৬৯ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার (১২ অক্টোবর) ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির সব উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভারতের হরিয়ানায় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির কারখানা পরিদর্শন করে। এ সময় নীতিমালা লঙ্ঘনের কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কি কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত বিশ্বের ফার্মেসি হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকার মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ করে ভারত। কিন্তু সম্প্রতি কাশির সিরাপ খাওয়ার পর গাম্বিয়ার ৬৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য খারাপ উদাহরণ।
এটি ভারতীয় ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রেও বড় একটি ধাক্কা। গত এক দশকে আফ্রিকায় ভারতীয় ওষুধ রপ্তানি দ্বিগুণ বেড়েছে। গত অর্থবছরে আফ্রিকায় ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ওষুধ রফতানি করেছে ভারত।
হরিয়ানার ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানায়, তদন্তে গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উৎপাদিত ওষুধের সুরক্ষা, কার্যকারিতা ও মানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ উৎপাদন তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেডেনের নির্বাহী নরেশ কুমার গয়াল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গত সপ্তাহে তিনি জানান, গাম্বিয়ায় কি ঘটেছে তা জানতে সেখানকার ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুই পক্ষ মিলে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় ভারত সরকার চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। যারা প্রতিকূল প্রতিবেদনগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে এর সঙ্গে ঘটনার সম্পর্ক খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সরবরাহ করা যাবতীয় তথ্যও যাচাই–বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে পরামর্শ দেবেন কমিটির সদস্যরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক মারিয়াঞ্জেলা সিমাও এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা মেডেনের কাশির সিরাপ নিয়ে তদন্ত করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যেসব শিশুকে মেডেনের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, তার বেশ কয়েকটি নমুনা বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও একটি প্রাথমিক ধারণায় পৌঁছেছে।
ল্যাবরেটরিতে মেডেনের চারটি কাশির সিরাপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এগুলোতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ডায়েথেলিন গ্লাইকোল ও ইথালিন গ্লাইকোলের মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এসব উপাদান মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্লিসারিনের তুলনায় সস্তা হওয়ায় অনেক ওষুধ কোম্পানি কাশির সিরাপ তৈরিতে ডায়েথেলিন গ্লাইকোল ও ইথালিন গ্লাইকোল ব্যবহার করে থাকে।
গাম্বিয়ার পুলিশও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে। মঙ্গলবার পুলিশের একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিডনিতে মারাত্মক প্রভাবের কারণে ৬৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ভারতে তৈরি এসব কাশির সিরাপ আমদানি করেছিল আটলান্টা-ভিত্তিক আটলান্টিক ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে এ বিষয়ে আটলান্টিক ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।