সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

মেঘনা নদীতে থামছে না ইলিশ শিকার

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৫:০২

মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একশ্রেণির জেলে প্রকাশ্যে ইলিশ শিকার চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন। নিষেধাজ্ঞার দশম দিনেও কৌশলে চলছে এ কার্যক্রম। সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে অভিযান পরিচালনাকারীদের তৎপরতার মধ্যেও অনেক জেলে নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন। ১টার পর নদীতে অভিযান পরিচালনাকারীদের উপস্থিতি কমে যায়। তখন ইলিশ শিকারে নামেন আরো বেশি জেলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিস্তীর্ণ নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে জাল ফেলে ইলিশ শিকার করার পাশাপাশি নদীর তীরে এনে বিক্রি করছেন বলেও জানান মেঘনা নদীতীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা।

জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযান আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। মৎস্য অফিস কর্তৃপক্ষের তৎপরতা উপেক্ষা করে মেঘনা নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করছেন। এ বছর কোস্ট গার্ড না থাকায় জেলেরা দিনে টহলরত মৎস্য অফিসের লোকজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে ইলিশ শিকার করছেন। আর রাতে মেঘনা নদীতে জোয়ার আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলেরা কারেন্ট জাল ফেলে বসে থাকেন। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে জাল তুলে লুকিয়ে ফেলেন। এতে প্রতিদিন মেঘনা নদীতে অনেক মা-ইলিশ ধরা পড়ছে।

সরেজমিনে গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত মেঘনা নদীর চর আবাবিল থেকে চর ভৈরবী পুরান বেড়ি থেকে কাটাখালী, চর ভৈরবী থেকে হাইমচর পর্যন্ত জেলেদের নদীতে ইলিশ শিকার করতে দেখা গেছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ এবং কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মেঘনা নদীর জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই শিকার করছেন ইলিশ। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য বিভাগ কিংবা নৌ-পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও তা অপ্রতুল বলে নদীতে জাল ফেলতে সাহস পাচ্ছেন জেলেরা। শুধু তাই নয়, জেলেরা নদীর তীরে মাছ ধরার ট্রলারে বসেই ইলিশ বিক্রি করছেন। জানা যায়, মাছ ধরে জেলেরা নৌকা নিয়ে তীরে অবস্থান করে এবং তাদের ধরা ইলিশ মাছ নৌকার তলায় রেখে দেয়। দেখে বোঝার উপায় নেই নৌকায় মাছ আছে। পরে এসব ইলিশ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে কেজি বিক্রি করছে।

মেঘনা নদীতে একাধিক জেলের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা নদীতে মাছ শিকারে নামতে পারছেন না। এতে অনেক জেলে পরিবার খেয়ে না-খেয়ে দিন পার করছে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তারা তা পাননি। কাটাখালী এলাকার কেরামত নামের এক জেলে বলেন, সকালে নদীতে অভিযানের লোকজন ছিল। তারা চলে যাওয়ার পর পরই জেলেরা নদীতে নেমে মাছ শিকার করছেন। দিনের শুরুতে একটু সমস্যা হলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা আর গভীর রাতে মাছ ধরতে কোনো সমস্যা দেখছি না। তিনি আরো বলেন, মাছ শিকার বন্ধ হলেও বিকল্প আয় না থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হয়। 

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইমদাদুল হক জানান, মা-ইলিশ সংরক্ষণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এ বছর রায়পুরে কোস্ট গার্ডের কোনো ক্যাম্প না থাকায় নদীতে ২৪ ঘণ্টাতে অভিযান করা সম্ভব হয় না। একদিকে অভিযান করলে হয়তো অন্যদিকে জাল ফেলতে পারে। তার পরও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে যেসব জেলে মাছ ধরছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ পর্যন্ত মেঘনা নদীতে চারটি মোবাইল কোর্ট ও ২৬টি অভিযান করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু জাল ও কয়েকটি নৌকা জব্দ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জেলেকে আটক বা জরিমানা করা হয়নি।

ইত্তেফাক/ইআ