শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানুষ কেন আশরাফুল মাখলুকাত

আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৩০

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষের এমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য সব মাখলুকে কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন:

১. মানবের সৃষ্টিপ্রক্রিয়া সুনিয়ন্ত্রিত ও চমত্কার :মহান আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টির সর্বোত্তম সেরা পদ্ধতি ও উন্নত প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুনরূপে গঠন করেছি।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত :১২-১৪)। তিনি আরো বলেন, ‘এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত, অতঃপর আমরা একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমরা কত সুনিপুণ স্রষ্টা।’ (সুরা মুরসালাত, আয়াত :২২-২৩)।

২. আল্লাহর হাতেই মানবের সৃষ্টি :পৃথিবীর সব মাখলুক আল্লাহপাকের সৃষ্টি। তিনি কোনো কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করলে বলতেন ‘কুন’ হয়ে যাও! তত্ক্ষণাত্ তা হয়ে যেত। সব সৃষ্টিকে তিনি ‘কুন’ প্রয়োগে সৃষ্টি করেছেন, কেবল মানুষকে তিনি নিজ হাতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত :৭৫)। ৩. আল্লাহই মানবদেহে ‘রুহ্’ ফুঁকে দেন :রুহ্ বা আত্মা মহান আল্লাহপাকের নিয়ন্ত্রণাধীন। আদম (আ.)কে সৃষ্টির পর আল্লাহপাক তার দেহে নিজেই ‘রুহ্’ ফুঁকে দিয়েছেন। সব মানুষের দেহে রুহের সঞ্চার তিনিই করেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, ‘অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রুহ সঞ্চার করেন।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত :৯)।

৪. সুনিপুণ ও চমত্কার দেহাবয়ব :দৈহিক সৌন্দর্য, মায়াবী মুখাবয়ব, অকল্পনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা কেবল মানবজাতিকে তিনি দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।’ (সুরা ত্বিন, আয়াত :৪)।

৫. বিশ্বময় মানবজাতির বিস্তার :পৃথিবীর সর্বত্রই সব মাখলুকের বিচরণ নেই। কিছু স্থলে, কিছু জলে, কিছু জমিনে, কিছু আকাশে, কিছু দৃশ্যপটে, কিছু আগোচরে। কেবল মানবজাতির বিচরণ পৃথিবীর সর্বত্রই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পর পরিচিতি লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত :১৩)।

৬. ফেরেশতাদের সিজদা সম্মাননা :মহান আল্লাহপাক তার বিশেষ সৃষ্টি পূতঃপবিত্র ফেরেশতাগণের সিজদা সম্মাননার মাধ্যমে আদম (আ.) তথা মানবজাতির মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক কোরআন মাজিদে বলেন, ‘আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, “তোমরা আদমকে সিজদা করো।” তখন তারা সিজদা করল, ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহংকার করল। আর সে হলো কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত’। (সুরা বাকারা, আয়াত :৩৪)।

৭. খলিফা হিসেবে সম্মানিতকরণ :পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে যাচ্ছি।” ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি এর মধ্যে (পৃথিবীতে) এমন একজনকে নিযুক্ত করবেন, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে, যেখানে কিনা আমরা আপনার পবিত্রতাকে প্রশংসাভরে বর্ণনা করছি এবং আপনার নিষ্কলুষতা ঘোষণা করছি? তিনি বলেছিলেন, “আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না”।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত :৩০)। ৮. যুল আকল বা জ্ঞানবান করে সৃষ্টি :মানবজাতিই যুল আকলের অধিকারী। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে সব ফেরেশতার সম্মুখে পেশ করলেন এবং বললেন, ‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত :৩১)।

৯. নবি-রসুল মনোনীতকরণ :আল্লাহপাক কেবল মানবজাতির মধ্য থেকেই নবি-রসুল নির্বাচন করেছেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই প্রতিটি জাতির কাছে একজন করে রসুল পাঠিয়েছি, যাতে করে তাদের বলে, ‘তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুত তথা শিরক থেকে দূরে থাকো।’ (সুরা আন নহল, আয়াত:৩৬)।

১০. মাখলুকাত মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত :আল্লাহপাক জগতের অগণিত মাখলুককে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা কি দেখ না, আল্লাহ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? এমন লোকও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাগিবতণ্ডা করে। (সুরা লুকমান, আয়াত :২০)। সর্বোপরি যারা আল্লাহর প্রতি, তার পাঠানো নবি-রসুলগণের প্রতি ইমান আনে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করে, তারাই প্রকৃত অর্থে ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ প্রকৃত দাবিদার। তাদের দাবির প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমান আনে ও সত্কর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। (সুরা আল বাইয়েনা, আয়াত :৭)।

লেখক: মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদ্রাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন