শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবাসন-সুবিধা পান না রুয়েটের ৭৪% ছাত্রী

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০৩

তীব্র আবাসিক সংকটে রয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য নির্মিত হয়েছে একটিমাত্র আবাসিক হল। ছাত্রীদের ৭৪ শতাংশের নেই কোনো আবাসিক ব্যবস্থা। ফলে মেস কিংবা ভাড়া বাসায় থেকে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এছাড়া নিরাপত্তার সংকট তো আছেই। অন্যদিকে রুয়েটের ছাত্র হলগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ৩৩ ভাগের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রুয়েটের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯২৮ জন। এরমধ্যে ছাত্রসংখ্যা ৪ হাজার ৫৯৪ জন এবং ছাত্রীসংখ্যা ১ হাজার ৩৩৪ জন। আবাসিক হল রয়েছে সাতটি, ছাত্রদের ছয়টি এবং ছাত্রীদের একটি। সূত্র মতে, রুয়েটের সাতটি আবাসিক হলে সিটসংখ্যা ২ হাজার দুটি। ছাত্রদের ছয়টি হলের মধ্যে শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম হলে ৩৫৪টি, শহীদ শহিদুল ইসলাম হলে ২২৮টি, টিনশেড হলে ১০০টি, শহীদ আব্দুল হামিদ হলে ২৪০টি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হলে ৪৮০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৫০টি সিট রয়েছে। ছাত্রদের হলে মোট সিটসংখ্যা ১ হাজার ৬৫২টি। ছাত্রীদের একমাত্র ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ হলের সিট রয়েছে ৩৫০টি।

রুয়েটে বর্তমানে অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯২৬ জন। এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেস কিংবা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির অনাবাসিক শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের একটি হল থাকায় হলে সিট পাওয়া কষ্টকর। তৃতীয় বর্ষে আছি তবু এখনো হলে সিট পাইনি। মেসে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন। বাইরে থেকে চলাচলে নিরাপদ বোধ করেন না। বাড়িতেও পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তায় থাকেন।

ইলেকট্র্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অনাবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কষ্টকর। হলে ছাত্রলীগের যারা রাজনীতি করেন, সেই বড়ভাইদের ধরে সাধারণত হলে উঠতে হয়। এছাড়া হলে ওঠা অসম্ভব। এ বিষয়ে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান চৌধুরী তপু বলেন, আমরা রুয়েটে কোনো সিট নিয়ন্ত্রণ করিনি। মাঝেমধ্যে আমাদের দলীয় কোনো শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রাধ্যক্ষের কাছে সুপারিশ করি মাত্র।

টিনশেড হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, বৃষ্টি হলেই হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মে গরমে হলে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়। এছাড়া ঝড়ের সময় ভয়ে থাকি কখন গাছপালা ভেঙে টিনের ওপর পড়ে ! এসব বিষয়ে হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ এস এম মেহেদি হাসান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাবা দিনমজুর। অনেক কষ্টে রুয়েটে ভর্তি হয়েছি। এরপর প্রাধ্যক্ষ স্যারকে বলে অনেক কষ্টে গণরুমে উঠেছি। কিন্তু একরুমে অনেক শিক্ষার্থী থাকায় পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছি না। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় খাবারের দামও বাড়ানো হয়েছে। তবে খাবারের মান মোটামুটি।’ 

প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামিম আনোয়ার বলেন, গণরুমে ২১টি সিট রয়েছে, সেখানে ১৮ জনের মতো শিক্ষার্থী থাকেন। খাবারের মান বাড়াতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরাই নিয়েছেন। রুয়েট অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে রুয়েটে ছাত্রীদের জন্য দুটি এবং ছাত্রদের জন্য দুটি আবাসিক হল নির্মাণাধীন। এছাড়া ছাত্রদের একটি হল দুইতলা থেকে চারতলায় উন্নীত করা হচ্ছে। এগুলো নির্মাণ শেষ হলে ছাত্রীদের শতভাগ আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।

 

ইত্তেফাক/ইআ