‘খেতের পাঁহাধান (পাকা) লইয়া খুবই দুচিন্তায় আছি। ধান কাটতে পারমু বইলা মনে অয়না। আত্তিয়ে (বন্যহাতি) আমগর সব পাঁহাধানে তো মই দিতাছে। রাইতে দিনে পহরা দিয়াও আত্তি খেদাইবার (তাড়াতে) পাইতেছিনা। ফসল ঘরে তুলবার না পাইলে তো বউ পোলাপাইন নিয়া না খাইয়া থাহন লাগবো।’ কথাগুলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকায় বন্য হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ আব্দুর রহিম মিয়া (৫০) ফসলহারা কৃষকের।
তিনি গারো পাহাড়ের সাত পাকের গোপে এলাকায় ১ একর ২ কাঠা জমিতে দেশীয় আগাম জাতের আমন ধান লাগিয়েছেন। ইতোমধ্যে ধানে পাক ধরেছে। এই পাকা ধান নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তা। কখন যে হাতি তাণ্ডব চালিয়ে কষ্টে ফলানো খেয়ে ফেলে। দুই দিন আগে রোববার (৩০ অক্টোবর) রাতে পাহাড়ের আন্ধারুপাড়া-ডালুকোনা গ্রামে লুইস নেংমিনজার ১ একর, জালাল মিয়ার ৪০ শতাংশ ও অজিত সাংমার ৪০ শতাংশ জমির পাকা ধান খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করেছে বন্য হাতির দল।
রহিমসহ অনেকেই জানান, বন্য হাতির অত্যাচার থেকে ফসল রক্ষা করতে দিনরাত পাহারা দিতে হচ্ছে। এমন কি রাত জেগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। এ পর্যন্ত ধান ক্ষেতে বন্য হাতি ৩ বার তাণ্ডব চালিয়েছে। ফসল কাটার শেষ মুহূর্তেও থামছে না হাতির তাণ্ডব। প্রায় প্রতিদিনই পাকা ধান ক্ষেতে আসছে ৪০/৫০টি বন্য হাতির দল। গ্রামবাসীরা হাকডাক ও চিৎকার করে এবং মশাল জ্বালিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফসল ঘরে তুলতে না পারলে পরিবারের খাদ্যের যোগান কীভাবে দেবেন এই দুশ্চিন্তায় এলাকার কয়েকশ কৃষক।
স্থানীয় কৃষক কামাল হোসেন, আসকর আলী, আব্দুস সাত্তার, হালিম উদ্দিন ও বর্গাচাষী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষাণী জস্টিন সাংমা, সুচনা মারাক ও প্রমীলা সাংমা জানান, তারা দুই যুগ ধরে বন্য হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো রকমে টিকে আছেন। মাঝে মধ্যেই বন্য হাতির দল আক্রমণ করে তাদের জানমালের ক্ষতি করছে।
সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাতা, তাড়ানি, মায়াঘাসি, কালাকুমা, নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও, দাওধারা-কাটাবাড়ি, ডালুকোনা, পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা-কালাপানি, বাতকুচি ও সমশ্চুড়া পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৮শ একর জমিতে আমন ধানে পাক ধরেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ধানকাটা শুরুও হয়েছে। এমন অবস্থায় বন্যহাতি থাণ্ডব চালিয়ে ফসলসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে।
সরকারিভাবে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি সরকারের বন বিভাগ থেকে বন্য হাতির দ্বারা নিহত পরিবারকে ৩ লাখ টাকা, আহতকে ১ লাখ টাকা ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্থকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে বন্য হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে সরকারিভাবে ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমরা সবসময় সর্তক রয়েছি।
এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও জানমাল রক্ষা করতে এলাকাবাসীকে আমরা সচেতন করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতি বাড়ি ও ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।