শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ওয়াশিংটনের কাছে নালিশ রিয়াদের

সৌদিতে শিগিগরই হামলা চালাতে পারে ইরান

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০২:৩২

ইরান শিগিগরই সৌদি আরবের বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারে, রিয়াদ এমন গোয়েন্দা তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তবে জার্নালের মঙ্গলবারের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ঐ গোয়েন্দা তথ্যের কোনো বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে—মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন, সৌদি ও তাদের মিত্র বাহিনীগুলোকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। 

ডব্লিউএসজের খবর অনুযায়ী, সৌদি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ইরান সৌদি আরবে ও ইরাকি শহর এরবিলে হামলা করতে চায়। এরবিলে মার্কিন সেনাদের অবস্থান আছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ঐ প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেছেন, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরানের হুমকির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন এবং প্রয়োজন হলে তারা সাড়া দিতে দ্বিধা করবে না। মার্কিন এ মুখপাত্র বলেন, ‘হুমকির পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন আর আমরা সামরিক ও গোয়েন্দা চ্যানেলের মাধ্যমে সৌদির সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখে চলেছি। ঐ অঞ্চলে আমাদের স্বার্থ ও আমাদের অংশীদারদের রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে আমরা দ্বিধা করব না।’

চলতি বছর বেশ কয়েকটি ঘটনার পর এরবিলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মার্চে ইরাকি শহরটিতে ডজনখানেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দেশটি আর সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে আরো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে তারা। সর্বশেষ হামলাগুলো এরবিলের কাছে তৎপর কুর্দি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে’ লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে বলে তেহরান দাবি করেছে। ইরানে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জন্য তেহরান বিদেশি শক্তিগুলোকে দায়ী করেছে, বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও সৌদি আরবকে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি গত মাসে প্রকাশ্যে রিয়াদকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা সাংবাদমাধ্যমে বিক্ষোভের খবর সম্প্রচারের মাধ্যমে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। 

ডব্লিউএসজের ভাষ্য অনুযায়ী সৌদি আরবকে সতর্ক করে সালামি বলেন, ‘এই বিষয়টির সঙ্গে আপনারা জড়িত আর আপনারা জানেন যে, আপনারা দুর্বল।’ তিনি সৌদি নেতাদের ইসরাইলের ওপর নির্ভর করার বিষয়েও সতর্ক করেন। ইরানি কমান্ডারের এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব ঐ সতর্কতা জানিয়েছে কি না, তা পরিষ্কার হয়নি। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন, ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, এতে সৌদি আরবেরও সমর্থন ছিল। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানবিরোধী একটি নতুন চক্র গড়ে উঠেছে। তবে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় উত্তেজনা কমাতে গত বছর তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছিল রিয়াদ। সৌদি আরব ২০১৯ সালে তাদের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছিল, তবে ইরান অভিযোগ অস্বীকার করে। কয়েক দশক ধরেই নেতৃস্থানীয় সুন্নি শক্তি সৌদি আরব ও শিয়া শক্তি ইরান পরস্পরের শত্রু হয়ে আছে। তারা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে লড়াইরত বিভিন্ন মিত্রকে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে এক ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে আছে।

সম্প্রতি সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাস জোটের দৈনিক তেলের উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যেও সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, এ পরিস্থিতির মধ্যেই সর্বশেষ ‘উদ্বেগের’ বিষয়টি সামনে এলো।

 

 

ইত্তেফাক/ইআ