বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১০১টি বই দেনমোহর, ফের আলোচনায় মিথুন-অন্তরা

আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০৬

‘মদ রুটি ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে— বই, সে তো অনন্ত যৌবনা’ -ওমর খৈয়ামের এই বিখ্যাত উক্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন মিথুন-অন্তরা নবদম্পতি। তারা বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে বইকে বেছে নিয়েছেন।

বিয়ের সংবাদ লিখতে গিয়ে ঢুকে পড়তে হবে বইয়ের গল্পে। খবরটি নতুন নয়। দ্বিতীয় বারের মতো ফের ১০১টি বই দেনমোহর হিসেবে মিথুন-অন্তরা নতুন জীবন শুরু করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদরে গত শনিবার (২৯ অক্টোবর) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের।

বই। দুই অক্ষরের শব্দটি জ্ঞানের মশাল হিসেবে আমাদের জীবনে জড়িয়ে আছে। বই নিয়ে জ্ঞানী-গুণী ও মনীষীরাও বলেছেন নানান ধরনের কথা। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।’ বই নিয়ে একটি চীনা প্রবাদ আছে এমন, ‘একটি বই পড়া মানে হলো একটি সবুজ বাগানকে পকেটে নিয়ে ঘোরা।’ 

কনে সুমাইয়া পারভীন অন্তরার বইয়ের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালবাসা। সেই ভালবাসা থেকে তার ইচ্ছে অনুযায়ী টাকা, স্বর্ণ-অলংকার, গহনার পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন ১০১টি বই। কবি পলিয়ার ওয়াহিদ বলেছেন, ‘ভালো বই আত্মার ওষুধ।’ 

অন্তরা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগগের সাবেক শিক্ষার্থী। ব্যতিক্রমী ইচ্ছে থেকে ১০১টি বই দেনমোহরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন অন্তরা। ঘর বেঁধেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রুহুল মিথুনের সঙ্গে। মিথুন বর্তমানে একটি সরকারি ব্যাংকে কর্মরত। বর-কনে উভয়ের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলায়।

দেনমোহর হিসেবে বই নিয়ে সুমাইয়া পারভীন অন্তরা বলেন, আমরা দেখে থাকি সমাজে বিয়ের দেনমোহর নিয়ে অনেক দর কষাকষি হয় এবং অনেক উচ্চহারে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই দেনমোহরের অধিকাংশই অপরিশোধিত থাকে। আমি মনে করি, এমন উচ্চ দেনমোহরে কাউকে বেঁধে রেখে সংসার করা যায় না, যে আমাকে ভালোবাসে সে এমনিতেই আমার সঙ্গে থাকবে। এ ছাড়া আমার স্বামীর কাধে দেনমোহরের এই ঋণের বোঝা থাকুক এটাও আমি চাইনি। 

স্ত্রীর এমন ব্যতিক্রমী ভাবনা নিয়ে রুহুল মিথুন বলেন, দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের কথা পাকাপাকি হলে, আমার শ্বশুর তার মেয়ের ইচ্ছের কথা জানান। এতে সবাই অবাক হন, পরে আমার পরিবার এই সিদ্ধান্তে মত প্রকাশ করেন। তারা ১০১টি বইয়ের লিস্ট দেন। লিস্ট ধরে বইগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট করতে হয়েছে তবে বিষয়টিকে খুবই উপভোগ করেছি। বিয়ের আসরেই দেনমোহর পরিশোধ করি এবং আমরা দুজনেই বিষয়টি নিয়ে খুবই খুশি।

বিয়ের পড়ানোর সময় কাজী প্রথমে এমন দেনমোহরে কিছুটা আপত্তি জানান, তবে সবাই মিলে তাকে বোঝানোর পর বই দেনমোহর হিসেবে রেখেই বিয়ে সম্পন্ন হয়।

নিখিল-সান্তনা

১০১টি বই নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম বিয়ে করেন বগ বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের সাতরাস্তা গ্রামের বাসিন্দা সান্ত্বনাকে বিয়ে করেন কবি নিখিল নওশাদ। ‘বিরোধ’ নামের একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ধুনটের গোসাইবাড়ী কাজি অফিসে এই বিয়ে সম্পন্ন  হয়। 

ইত্তেফাক/পিও