রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে যে প্রাণী

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১৯:১২

অক্সিজেন ছাড়া মানুষের পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়। কিন্তু শুধু নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস নয়, শরীরের অঙ্গগুলিতেও অক্সিজেনের অভাব ঘটলে সংকট সৃষ্টি হয়। একটি প্রাণী মানুষের সেই অভাব মেটাতে সহায়ক হতে পারে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে জার্মানি সংবাসদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।

এই প্রাণীটি অন্য কিছু নয় কেঁচো। এর ল্যাটিন নাম আরেনিকোলা মারিনা। ৩৫ কোটি বছর ধরে মানুষের আঙুলের মতো পুরু ও ৪০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই প্রাণী পৃথিবীতে বাস করছে।

সেই কেঁচোর শরীরে এমন এক পদার্থ আছে, যা মানুষের জরুরি প্রয়োজন। বালুখেকো এই প্রাণীর রক্তের যে উপাদান শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে, সেই হিমোগ্লোবিন মানুষের কাজে লাগতে পারে। ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ ইয়ানিক ল্য ম্যোর বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমরা এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি, যা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারে। কিন্তু কিছুই পাই নি। এটা সত্যি বড় এক খবর।’ 

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী হিসেবে ফ্রাংক সাল প্রায় ২৫ বছর আগে এমন প্রাণী নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন, যেগুলি কঠিন পরিবেশে বাস করে। সে সময়কার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে সবাই আমাকে নিয়ে হেসেছিল। বলেছিল, সামুদ্রিক ওয়ার্ম নিয়ে কী যে বলে! আমরা চিকিৎসক, আর তুমি হাসপাতালে ওয়ার্ম নিয়ে কথা বলছো? আমি জানতাম, বালুর মধ্যে আরেনিকোলা মারিনা নামের এই লাগওয়ার্ম থাকে। মনে প্রশ্ন জাগলো, জোয়ার ও ভাটার সময়ে সেই প্রাণী কীভাবে নিঃশ্বাস নেয়? সেটা ছিল নিতান্ত মৌলিক গবেষণা, সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত এক জিজ্ঞাসা। পরীক্ষা করে দেখলাম যে সেই ওয়ার্ম ভাটার সময় নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়। শুধু পানির নীচে নিঃশ্বাস নেয়।''

লাগওয়ার্মেরও মাছের মতো কানকো আছে। কিন্তু ভাটার সময়ে সেটির দম বন্ধ হয়ে যায় না, প্রাণীটি বরং নিঃশ্বাস ধরে রাখে। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ফ্রাংক সাল জানালেন, ‘সেই ওয়ার্ম পরীক্ষা করে বিশেষ এক অণু শনাক্ত করলাম। সেটি লোহিত রক্ত ​​কণিকায় থাকে না, রক্তের মধ্যেই ভেসে বেড়ায়। মানুষের হিমোগ্লোবিনের গঠনের সঙ্গে সেটির অনেক মিল রয়েছে।’

ব্রেস্ট শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইয়ানিক ল্য ম্যোর লাগওয়ার্মের সেই গুণের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন। ইয়ানিক মনে করিয়ে দিলেন, ‘এই প্রেপারেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেটি টিস্যুর মধ্যে অক্সিজেন আনতে পারে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর সেটাই অন্যতম প্রথম কাজ। কারণ আমরা জানি, যে প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার সময় অঙ্গের অক্সিজেন লাগে।’

শুধু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময়েই সেই আবিষ্কার কাজে লাগে না। শরীরের কোনো অংশে অক্সিজেন কমে গেলেই ওয়ার্ম হিমোগ্লোবিন প্রয়োগ করা সম্ভব।

একটি অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সেটা দেখানো হচ্ছে। মানুষের রক্তের কোষে হিমোগ্লোবিনের তুলনায় লাগওয়ার্মের অণু প্রায় ৪০ গুণ বেশি অক্সিজেনের পরমাণু বহন করতে পারে।

একই সঙ্গে সেটি রক্তের কোষের তুলনায় অনেক ছোট। এমনকি ভেসেল বা ধমনী সংকীর্ণ বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও সেটি চলাচল করতে পারে। ফলে স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও সম্ভবত সেটি প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক সময়ে ক্ষত না সারলে অথবা কোভিড ১৯ সংক্রমণের কারণে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিলেও হয়তো সেই প্রক্রিয়া কাজে লাগবে। ফ্রাংক সাল বলেন, ‘আসলে আমরা অসংখ্য ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের কথা ভাবতে পারি। সাধারণ ওয়ার্ম থেকে পাওয়া অক্সিজেনের বাহক এমনভাবে কাজে লাগতে পারে।’

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন