রাজধানীর উত্তরায় দুবাই প্রবাসীর স্বর্ণের বার ছিনতাইকালে এক ভুয়া ডিবি পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উত্তরা পূর্ব থানাধীন জসিম উদ্দিনের ব্র্যাক ব্যাংকের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আরও দু'জন পালিয়ে যায়।
গ্রেফতার নূরে খোদা সিদ্দিকি (৩৭) নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার টেঙ্গা গ্রামের ইয়াকুব এয়ার খানের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর কচুক্ষেতে থাকেন। তিনি একসময় পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে পুলিশ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ভুক্তভোগী দুবাই প্রবাসী এবং টাঙ্গাইলের মির্জাগঞ্জ উপজেলার মৃত শহর আলীর ছেলে মো. হাসান ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে আমি দুবাই থেকে বিমানবন্দরে আসি। দুবাই থেকে আসার সময় আমি আমার দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসি। কয়েকজনের কাছ থেকে দুই-তিন লাখ টাকা করে সংগ্রহ করে এসব স্বর্ণের বার কিনে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ভুক্তভোগী বলেন, বিমানবন্দরে নামার পর সকালে স্বর্ণের দাম কম ছিল। যার কারণে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করি। পরে আমার ভাতিজা সেলিম ও শাহিনের (দুই সহোদর) একজন কাস্টমার স্বর্ণের রেট সব থেকে বেশি বলে। তাদের রেট ঢাকার তাতী বাজারের থেকেও ভরিতে ৩০০ টাকা করে বেশি ছিল। এতে অন্তত নয় হাজার টাকা বেশি লাভ হতো আমার।
হাসান বলেন, তখন আমি তাদের দেওয়া ঠিকানা জসিম উদ্দিনের ব্র্যাক ব্যাংকের আন্ডারগ্রাউন্ডে যাই। গিয়ে দেখি দু'জন রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আরও দু'জন মুখে মাস্ক লাগিয়ে আমাদের কাছে চলে আসে। পরে একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করে, মাল কার কাছে দে। তখন আমি আমার পকেট থেকে বের করে স্বর্ণের বার দিয়ে দেই। সঙ্গে সঙ্গেই তারা এক হাতে পুলিশের আইডি দেখিয়ে আমায় বলেন, ‘আমি ডিবির লোক।’ আরেক হাতে হ্যান্ডকাফ বের করে আমার বাম হাতে লাগিয়ে দেয়। তখন তারা আমাকে বলেন, ‘এখানে কোনো কথা নয়, তোদেরকে থানায় যেতে হবে। থানায় গিয়ে বাকি কথা হবে।’ তখন আমি তাদেরকে বলি, স্যার আমি তো কোনো অন্যায় কাজ করিনি। আমি বৈধভাবে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে স্বর্ণের বার নিয়ে আসছি। আমায় কোথায় যেতে হবে আমি যাব, কোনো সমস্যা নেই। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা ভাতিজা সেলিম তাদেরকে বলে উঠে, ‘আপনারা তো ভুয়া ডিবির লোক।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আমার হাতে হাতকড়া রেখেই দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
‘এ সময় আমরা ভুয়া ডিবি পুলিশ বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন তাদের একজনকে ধরে ফেলে। বাকি দুজন পালিয়ে যায়। জনতা ধরে ফেলা নূরে খোদা সিদ্দিকিকে ধোলাইও দেয়। পরে থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে’- বলেন ভুক্তভোগী।
হাসান আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়া দু'জন আমার দুটি স্বর্ণের বার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেছি।
এদিকে, বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার হওয়া নূরে খোদা সিদ্দিকি বাংলাদেশ পুলিশে ২০০৪ সালে কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি প্রমোশন পেয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হয়েছিলেন। কিন্তু কক্সবাজারের এক ফৌজদারি অপরাধের কারণে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় পুলিশ থেকে চাকরিচ্যুত হন। নূরে খোদা উত্তরা পূর্ব এবং সাবেক মডেল থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
উত্তরার বিভিন্ন বাসিন্দা ইত্তেফাক অনলাইনকে জানান, উত্তরায় কর্মরত থাকা অবস্থায়ও বেপরোয়া ছিলেন নূরে খোদা। প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগণকে আটক করে বাণিজ্য করতেন। এক পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি টের পেলে তাকে বদলি করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দুবাই প্রবাসীর স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেওয়ান আলী (৪২) ও শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামের আরও দু'জন পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। পলাতক দু'জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ভুয়া ডিবি পুলিশ সদস্য নূরে খোদা সিদ্দিকি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের টার্গেট মূলত প্রবাসীদের। তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে স্বর্ণের বার কেনার নাটক হিসেবে ক্রেতা সাজতেন। পরে স্বর্ণের বার হাতে নিয়ে নেওয়ার পর ডিবি পুলিশ সদস্যের পরিচয় দিয়ে ছিনিয়ে নিতেন। দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।