শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ শুরু: ফখরুল 

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ২০:২১

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা নতুন যুদ্ধে নেমেছেন। এই যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। আপনাদের সিলেট থেকেই নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। এ যুদ্ধ শেখ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ।  

নিত্যপণ্যসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিতে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ছবি: আব্দুল বাতিন ফয়সল, ইত্তেফাক, সিলেট

জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে এ গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষের এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তিনি বলেন, এ সমাবেশ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাই, সবাই ঐক্যবব্ধ হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন কি সুষ্ঠু হয়েছে? হয়নি। তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। এ সরকার মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। তাদের বিচার এ দেশের জনগণ করবে। জনগণের আদালতে তাদের বিচার হবে।’

তিনি বলেন ‘দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই। প্রতিদিনই নিত্যেপণ্যের দাম বাড়ছে। চালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ বলেছিলে ১০ টাকা কেজি ধরে চাল খাওয়াবে। কিন্তু এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকার কম চাল মিলে না। দেশের ৩ কোটি মানুষ বেকার। 

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ মামলা মামলা খেলায় লিপ্ত ‘তারা আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। এখনও দিচ্ছে। গায়েবি মামলায় আমাদের অনেককে গ্রেফতার করেছে। এভাবে গত ১৪ বছর ধরে তারা এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। 

সংবিধান নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন ‘প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছেন। এ সংবিধান তো তিনি তৈরি করেছেন। কিন্তু যে সংবিধান কাটাছেঁড়া করে তিনি নতুন করে নিজের মতো সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তা তো হতে পারে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবো।’ 

তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ফ্যাসিস্ট-দানবীয় সরকারকে পরাজিত করতে হবে। যারা আমাদের সমস্ত স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

ছবি: আব্দুল বাতিন ফয়সল, ইত্তেফাক, সিলেট

ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি; অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। পুলিশ দিয়ে, আমলা দিয়ে, রাতের অন্ধকারে সবকিছু পাল্টিয়ে দেবেন ওটা হবে না...। জনগণ তার ভোট এবার দেখে নেবে। করায়-গণ্ডায় বুঝে নেবে। সেই ভোট হতে হবে যে ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’

ফখরুল আরও বলেন ‘ভোলায় আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে নূরে আলম, ও মুন্সীগঞ্জে শাওন প্রধানকে এই সরকারের পুলিশ এবং গুণ্ডাবাহিনী হত্যা করেছে। তারা মনে করছে আগের মতো হত্যা করলে সবকিছু থেমে থাকবে। কিন্তু থেমে থাকেনি বরং উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। অনুপ্রাণিত হয়েছে ও একটার পর একটা বিভাগীয় সমাবেশ বেশি জনসমাগমের মাধ্যমে সফল হচ্ছে।’ 

তিনি সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন ‘সিলেটের ইতিহাস যুদ্ধের ইতিহাস। এ সিলেটের মাটি পবিত্র। যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেছিলাম। আসুন এখন আর বসে থাকার সময় নেই। সমস্ত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, আমরা সকলে এক হয়ে যেভাবে ৭১ সালে লড়াই করেছিলাম, সংগ্রাম করেছিলাম সেইভাবে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করি। জনগণের রাষ্ট্র নির্মাণ করি।’

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় শুরু হওয়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম শাহনাজ। এর আগে কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় সমাবেশ শুরু হয়।

ছবি: আব্দুল বাতিন ফয়সল, ইত্তেফাক, সিলেট

পরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা ব্ক্তব্য দেন। বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকার এই দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশকে বাঁচাতে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। না হলে দেশ ও মানুষের মুক্তি নেই।

বক্তারা বলেন, আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করছে সরকারের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নেই। আজকের এই সমাবেশে আমাদের সবার একই ‘কথা দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’। 

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ফজলুর রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদী লুনা, উপদেষ্টা ডা. এনামুল হক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ কৃষি ও ঋণবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ।

 

ইত্তেফাক/পিও