ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ইউটিউব দেখে প্রথমবারের মত কমলা চাষ করে নতুন দিগন্তের শুরু করেছে কৃষক আলমগীর। এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চায়না-থ্রি-জাতের কমলার আবাদ করেন এবং বাম্পার ফলনও হয়েছে। এমনকি তার বাগানে কমলা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ভিড় করছেন।
উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের যুবক মো. আলমগীর হোসেন দীর্ঘ দুই দশক প্রবাসে থাকার পর, কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে অনেকদিন বেকার ছিলেন। এরপর বেশ কয়েকদিন চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হয়ে চাষাবাদে দিকে ঝুঁকেন।
কৃষক আলমগীর বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার এক কমলা আবাদের ভিডিও দেখে ওই চাষির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরে ওই বাগান পরিদর্শন করে চাষির কাছ থেকে পরামর্শের পাশাপাশি চায়না থ্রি-জাতের কমলার চারা নিয়ে আসেন। চাচার কাছ থেকে ৬৫ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন কমলার আবাদ। মাত্র দুই বছরের মাথায় তার বাগানে কমলার ফলন পেয়ে অনেকটাই খুশি চাষি আলমগীর।
তিনি বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে ১৮৫টি চারা রোপন করেছি। ১৭০ টাকা কেজি দরে এ পর্যন্ত এক হাজার থেকে ১২শ কেজি কমলা বিক্রি করেছি। দর্শনার্থীরা কমলা দেখে এসে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাগান করার সময় গ্রামের অনেকেই বলেছিলেন এই এলাকায় কমলার চাষ হবে না। আমি মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করেছি। এখন আমি সফল হয়েছি। খরচ বাদ দিয়ে আমার এই বাগান থেকে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা কমলা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
আলমগীরের সাফল্য দেখে আশপাশের এলাকার চাষিরা কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
তারা বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে তারাও অনাবাদি জমিগুলোতে কমলার বাগান তৈরি করবেন।
বিজয়নগর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মো. আব্দুল ওয়াদুদ ও হাদিউল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে তারা একাধিকবার পরীক্ষামূলকভাবে কমলার চাষ করেও সুফল পায়নি। তবে সফল চাষি আলমগীরের কাছ থেকে এবার পরামর্ম নিয়ে এই অঞ্চলে কমলার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে জানান তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বাগানে ঘুরতে আসা কাজী নূরজাহান বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কোথাও খোলামেলা জায়গা নেই। তাই আমি আমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে এই বাগানে এসেছি। গাছে গাছে কমলা ঝুলছে, দেখতেও খুব ভালো লাগছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ জানান, এ এলাকার জমি কৃষির জন্য উপযোগী। এখানে বিভিন্ন ফলের বাম্পার ফলন হয়। তবে এই এলাকায় কমলার চাষ হবে বলে মনে হয়নি। তাই লসের কথা চিন্তা করে চাষিদের কমলা চাষে সহযোগীতা করা হয়নি।তবে এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে সহযোগীতা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ জানান, এ অঞ্চলে কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে এবং চাষিদেরকে কমলা চাষে উৎসাহিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।