শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সার্ব ও আলবেনিয়া সরকারের মধ্যে ফের উত্তেজনা কেন? 

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ১৪:২৩

গাড়ির লাইসেন্স প্লেট নিয়ে কসোভোর জাতিগত সার্ব এবং আলবেনিয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। কসোভো যুদ্ধের ২৩ বছর পর সার্ব ও আলবেনিয়ান গ্রুপগুলোর মধ্যে আবার সংঘাত শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে উত্তেজনা কমাতে ২৩ নভেম্বর দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কসোভো হচ্ছে ইউরোপের ভূমিবেষ্টিত ছোট্ট একটি দেশ। এর চারদিকে রয়েছে বলকানের চারটি দেশ আলবেনিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়া, মন্টেনিগ্রো ও সার্বিয়া। অনেক সার্বিয়ান মনে করেন, এটাই হচ্ছে তাদের জাতির উৎপত্তিস্থল।

কিন্তু কসোভোতে যে ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করে, তাদের ৯২ শতাংশ আলবেনিয়ান আর ৬ শতাংশ সার্বিয়ান। বাকিদের মধ্যে আছে বসনিয়াক, গোরান, টার্কস ও রোমা। উনিশশো নব্বইয়ের দশকে যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা দাবি করেছিল কসোভো।

কসোভোতে যে ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করে, তাদের ৯২ শতাংশ আলবেনিয়ান আর ৬ শতাংশ সার্বিয়ান।

কিন্তু তার জবাবে যে জাতিগত আলবেনিয়ানরা স্বাধীনতা চাইছিল, তাদের ওপর সার্বিয়া ভয়ানক দমন-পীড়ন অভিযান শুরু করে। এর অবসান ঘটে ১৯৯৯ সালে, যখন নেটো সার্বিয়ার বিরুদ্ধে বোমা হামলা অভিযান শুরু করে।

এরপর কসোভো থেকে সার্বিয়ার সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু কসোভোর অনেক আলবেনিয়ান এবং সার্বিয়ানদের কাছে সেই বিরোধ এখনো শেষ হয়নি। নেটো নেতৃত্বাধীন কসোভো ফোর্স এখনো সেখানে মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ৩৭৭০ সেনা মোতায়েন করা রয়েছে।

নেটো নেতৃত্বাধীন কসোভো ফোর্স এখনো সেখানে মোতায়েন রয়েছে।

২০০৮ সালে একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে কসোভো। এখন জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ৯৯টি দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশের মধ্যে ২২টি দেশ রয়েছে। কিন্তু রাশিয়া ও চীন এখনো জাতিসংঘে কসোভোর সদস্য হওয়া আটকে রেখেছে।

সার্বিয়া কখনোই কসোভোকে স্বীকৃতি দেবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার ভুসিস। সার্বিয়া অথবা কসোভো কোনো দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। তবে ২০১২ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছে সার্বিয়া।

সার্বিয়া কখনোই কসোভোকে স্বীকৃতি দেবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার ভুসিস।

এদিকে কসোভো জানিয়েছে, তারা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ইইউ সদস্য পদের জন্য আবেদন করবে। বহুদিন ধরেই কসোভোর সার্ব সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং আলবেনিয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছে। ২০২২ সালে এই উত্তেজনা আইন অমান্য কর্মসূচীতেও গড়িয়েছিল। 

কসোভোর সরকার চায়, সেদেশের সার্ব এলাকার লোকজন গাড়িতে সার্বিয়ার ইস্যু করা লাইসেন্স প্লেট ব্যবহার করে, তার বদলে কসোভোর লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করবে। কিন্তু সেসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার সার্বিয়ান বাসিন্দা কসোভার নাম্বার প্লেট ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণ তারা কসোভোর স্বাধীনতা স্বীকার করে না।

কসোভোর সরকার চায়, সেদেশের সার্ব এলাকার লোকজন গাড়িতে সার্বিয়ার ইস্যু করা লাইসেন্স প্লেট ব্যবহার করে, তার বদলে কসোভোর লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করবে।

এই বছর গ্রীষ্মকালে সার্বিয়া সীমান্তবর্তী কসোভোর উত্তরাঞ্চলে জাতিগত সার্বিয়ানরা রাস্তাঘাট অবরোধ করে রেখেছিল। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে তারা গোলাগুলি করেছিল বলেও জানা গেছে। ফলে কসোভোর সরকার নতুন আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছে। উত্তেজনা কমাতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এই চুক্তি অনুযায়ী, সার্বিয়ার নাম্বার প্লেট থাকা গাড়িগুলোকে জরিমানা করা বন্ধ করবে কসোভো। কসোভোর কোনো শহরের কোনো গাড়ির জন্য নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করবে না সার্বিয়া। গত আগস্ট মাসে কসোভোর সরকার দাবি করেছিল, সার্বিয়া সেখানে জাতিগত উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে এবং রাশিয়া সেটি সমর্থন করছে।

আগস্ট মাসে কসোভোর সরকার দাবি করেছিল, সার্বিয়া সেখানে জাতিগত উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে এবং রাশিয়া সেটি সমর্থন করছে।

সার্বিয়া আর রাশিয়া দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউরোপীয় দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাতে যোগ দিতে রাজি হয়নি সার্বিয়া। গত মে মাসে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ভুসিস রাশিয়ার সঙ্গে একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, যাকে তিনি তার দেশের জন্য উপকারী চুক্তি বলে বর্ণনা করেছেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা কসোভো সরকারকে দায়ী করে জানান, তারা ভিত্তিহীন বৈষম্যমূলক আইন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে।

কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানী

কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানী জানান, ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো কসোভোকে ব্যবহার করে ইউক্রেনের বর্তমান সংকটকে বিস্তৃত আর ইউরোপকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারেন।

ইত্তেফাক/ডিএস