ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি ওষুধ কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে রোগীদের। কখনো হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসিতে, কখনো হাসপাতালের ভেতরেই চলছে সরকারি ওষুধের রমরমা ব্যবসা। এমন অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
জনসাধারণের সুবিধার্থে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চাহিদার প্রায় ৭২ শতাংশ ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করে সরকার। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ের এই সরকারি হাসপাতালে প্রায় শতভাগ ওষুধ কিনতে হয় রোগীদের।
৬ নভেম্বর সরকারি ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরে ওসমান গণি (২৫) নামে এক যুবক। তিনি হাসপাতালে মেডিক্যাল এ্যাসিষ্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স (ম্যাটস) করছিলেন। ওসমান গণির কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, হাসপাতালে সরকারি ওষুধের রমরমা ব্যবসার কথা। এরপর থেকেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় জেলাজুড়ে। নভেম্বরের ২৪ তারিখে জামিনে মুক্তি পান সরকারি ওষুধ বিক্রির দায়ে গ্রেফতার হওয়া ওসমান গণি।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) ওসমান গণি জানান, হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল চক্রের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছে সরকারি ওষুধের অবৈধ বাণিজ্য। ম্যাটসের বিভিন্ন ছাত্র, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও দালাল চক্রের সহায়তায় হাসপাতালেই বিক্রি হয় সরকারি ওষুধ। এছাড়াও হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ওষুধের বড় একটি অংশ বিক্রি হয় হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসিগুলোতে।
ওসমান গণি আরও জানান, সরকারি ওষুধ বিক্রির ঘটনায় আমি একেবারে নিচের স্তরে কাজ করি। আমার সঙ্গে ম্যাটসের আরও কিছু ছাত্র, নার্স ও ওয়ার্ডবয় এই কাজগুলো করি। হাসপাতালের ভেতরে ওষুধের ক্রেতার খোঁজ করা, কিনতে রাজি করানো ও দামাদামি শেষে ওষুধ বিক্রি করাই আমাদের কাজ। গ্রাম থেকে আসা গরীব ও অশিক্ষিত রোগীরাই আমাদের টার্গেট থাকে। হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে আমরা ওষুধ সংগ্রহ করি। দিনশেষে মোটা অংকের ভাগ পাই। তবে আমাদের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করে হাসপাতাল সিন্ডিকেটের কয়েকজন।
ঠাকুরগাঁও সুজনের সভাপতি মনতোষ কুমার দে জানান, আমরা দেখছি রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। পাওয়া যাচ্ছে হাসপাতালগুলোর সামনের ফার্মেসি ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে। ওষুধের গায়ে ‘সরকারি সম্পদ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ’ লেখা থাকলেও থেমে নেই সরকারি ওষুধ বিক্রি। এতে জেলার বেশিরভাগ দরিদ্র জনগণ যেমন সরকারি ওষুধ পাচ্ছে না, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওষুধ বিক্রেতা জানান, হাসপাতালের সামনের প্রায় প্রতিটি দোকানেই সরকারি ওষুধ পাওয়া যাবে। সবাই রাখছে, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাকিদের রাখতে হয়। হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাধ্যমে এগুলো প্রতিনিয়ত বাহির মার্কেটে আসছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল জানান, চলতি মাসে সরকারি ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে একজন ধরা পড়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন নূর নেওয়াজ বলেন, চলতি মাসে সরকারি ওষুধ বিক্রির দায়ে যুবক গ্রেফতার হয়েছে বিষয়টি অবগত আছি। এর পেছনে বড় কোনো চক্র থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। দ্রুতই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।