বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রতিদিন পরিবেশে মিশছে ১৪০ টন বর্জ্য

নিষিদ্ধ পলিথিন ও শপিং ব্যাগে সয়লাব চট্টগ্রাম 

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:০০

নিষিদ্ধ পলিথিন ও শপিং ব্যাগে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে নানা পণ্যসামগ্রীর বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বোতল ও কনটেইনার। পরিত্যক্ত পলিথিন নালা ও খালের পানিতে ভেসে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে এর তলদেশ ভরাট করছে। ক্রমাগত নাব্য হারানো চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল ও কর্ণফুলী নদীতে এখন ড্রেজিং করা যাচ্ছে না সহজে। দূষণ আর নাব্য সংকটে কর্ণফুলী নদী এখন প্রায় মাছশূন্য। জলজ উদ্ভিদও প্রায় নিশ্চিহ্ন। এমনটিই বলছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

ছবি- সংগৃহীত

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে চট্টগ্রামে ভয়াবহ দূষণ বিস্তারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্যের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে দৈনিক পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৯ টন। যার ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ রিসাইক্লিং যোগ্য। কিন্তু তা রিসাইক্লিং করা হয় না। এসব পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ কর্তৃক সংগ্রহ হয় ১০৯ টন আর অসংগৃহীত থেকে যায় ১৪০ টন বর্জ্য। অসংগৃহীত এই ৫৬ দশমিক ২২ শতাংশ বা ১৪০ টন পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জ্যই চট্টগ্রামের পরিবেশ তথা নদী-খাল-নালা, কৃষিজমি, সমুদ্রসৈকতসহ সর্বত্র ভয়াবহ দূষণ বিস্তার করে চলেছে। সেই সঙ্গে এগুলো নগরীর জলাবদ্ধতা এবং মশা-মাছি প্রজননেরও প্রধান কারণ। চুয়েট গবেষণা বলছে, এই দূষণের কারণে চট্টগ্রামবাসীর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) চট্টগ্রাম চ্যাপটারের প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইন ইত্তেফাককে বলেন, নিষিদ্ধ পলিথিন-প্লাস্টিক প্রতিরোধে সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একশ্রেণির ব্যবসায়ী আর্থিক ক্ষতির কারণে পথে বসার অজুহাতে ক্ষতিকর পলিথিন-প্লাস্টিক ও নিষিদ্ধ শপিং ব্যাগ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। অথচ আমাদের দেশে দ্রুত ও সহজে ধ্বংসযোগ্য পাটের পলিথিন আবিষ্কৃত হলেও সেটি তাদের কারণেই বাজারে আনা যাচ্ছে না। অথচ সরকারেরও এখানে দায়িত্ব হচ্ছে—ঐসব ব্যবসায়ীদের পাট থেকে উৎপাদিত সহজে বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন উৎপাদনে প্রযুক্তি ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করা। তাহলে ব্যবসায়ীরাও বাঁচে, চট্টগ্রাম তথা সারা দেশের পরিবেশ রক্ষা পায়।

চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের প্রেসিডেন্ট শরিফ চৌহান ইত্তেফাককে বলেন, পলিথিনের কারণে কর্ণফুলী নদীর নাব্য ভয়াবহভাবে কমছে, তাতে ড্রেজিং করতে গিয়ে পলিথিনে আটকানো মাটি সহজে ওপরে তোলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এই শহর ও পৃথিবী রক্ষায় নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা এখনই প্রয়োজন।

ছবি- সংগৃহীত

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস ইত্তেফাককে বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিষিদ্ধ পলিথিন ও শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। গত মাসে অভিযান চালিয়ে আমরা সাত টন নিষিদ্ধ পলিথিন, শপিং ব্যাগ আটক করেছি। আমাদের অভিযানে চট্টগ্রামে তিনটি পলিথিন কারখানা বন্ধ রয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম