শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আজ

‘কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লেও, বেড়েছে শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধীর সংখ্যাও’

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০০

জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নূরজাহান যখন স্কুলে ভর্তি হতে যান, তখন তাকে স্বাভাবিক কোনো স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এসএসসি পাশ করার পর কোনো কলেজেই তাকে স্বাভাবিকভাবে ভর্তি করা যায়নি। এইচএসসি পাশ করলে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির সময়ও একই অবস্থা হয়। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পড়ার সুযোগ তৈরি হলে নূরজাহান ভর্তি হন আইনে। এখানেই তিনি ভালোভাবে এলএলবি, এলএলএম পাশ করেন। তারপর শুরু হয় কর্মজীবনে প্রবেশের যুদ্ধ।

প্রথমেই বিচারক পদে নিয়োগের জন্য ফর্ম কিনতে গেলে বাধা পান নূরজাহান। অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বারের সদস্য পদ পান তিনি। আইনজীবী হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার আদায়ে উপস্থিত হন কোর্টে। প্রতিবন্ধকতার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আর এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাস্কর ভট্টাচার্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবন্ধী বিষয়ক পরামর্শদাতা। তিনি বলেন, অনেক বাধা, প্রতিবন্ধকতা থাকলেও গত এক দশকে বেড়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ। আবার একইভাবে বেড়েছে শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যাও।

প্রতীকী ছবি

এমন অবস্থার মধ্যে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ : প্রবেশগম্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে উদ্ভাবনের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য করে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস।     

সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনেরা বলছেন—প্রযুক্তির এই সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রয়োজন।

শুধু নেই, নেই আর নেই
সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত আফিয়া কবীর আনিলা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হন শর্ত সাপেক্ষে। তার ফলাফলে দুটি ‘ই’ থাকলে তাকে বলা হয় ভর্তি করা হলেও ‘ই’ পরিবর্তন না করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হবে। আনিলা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। কারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নানা বৈষম্য আর বঞ্চনার মধ্যে পড়াশোনা করে। তাই তাদের কিছুটা সুযোগ দিতে হবে। এই চ্যালেঞ্জে তিনি জয়ী হলে এখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আনিলা বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য তেমনভাবে প্রবেশগম্যতা তৈরি হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশগম্য ভবন নেই, টয়লেট নেই, নেই গণপরিবহন। শিক্ষকদের পরামর্শ আমি অন্যদের মতো করে পাইনি প্রবেশগম্য অবকাঠামো না থাকায়।

ছবি- সংগৃহীত

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা ‘তৈরি ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আশফাক উল কবীর বলেন, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন-২০১৩ এ শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি এবং এর বিধিমালা ও কর্ম পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আজও। তিনি বলেন, ২০১২ সালে সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হয় ২০১৮ সালের মধ্যে যানবাহনকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করা হবে। কিন্তু ২০১৮ সাল পেরিয়ে আমরা ২০২২ সালও শেষ করে ফেললাম, অবকাঠামোগত পরিবর্তন পেলাম না। একটাও গণপরিবহন প্রতিবন্ধীবান্ধব না। ১৬ ডিসেন্বর উদ্বোধন করা হবে প্রতিবন্ধী বান্ধব মেট্রোরেল। কিন্তু মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কীভাবে যাবে—এমন প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি। তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে প্রবেশগম্যতা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আইন হয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন