শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পদ্মাসেতু-শরীয়তপুর ফোরলেন সড়ক

সড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, ঘটছে দুর্ঘটনা

আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৪২

শরীয়তপুরে ফোরলেন সড়ক নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের উন্নয়ন করতে গিয়ে যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে এ সড়ক। সড়ক নির্মাণ কাজ এমন অবস্থায় যেমন বেড়েছে ভোগান্তি, তেমনি বেড়েছে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

ছবি- সংগৃহীত

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর নাওডোবা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালের মার্চে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। আর এর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য সময় দেওয়া হয় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপর কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এদিকে দ্রুত ফোরলেনের কাজ শেষ করতে ২ ডিসেম্বর শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম সংসদ ভবনে নিজ সরকারি অফিসে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, সড়ক ও জনপদের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুরুজ মিয়া, জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার সাইফুল হক, জাজিরা উপজেলা চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার, সড়ক ও জনপদ শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদোয়ানুর রহমান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল, রিলেভেল, মেসার্স জামিল ইকবাল ও মেসার্স সালেহ আহমেদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজের অগ্রগতি নিয়ে সভা করেন।

সরেজমিন গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২৬ জুন থেকে শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকায় সরাসরি যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে সরু সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। 

ছবি- সংগৃহীত

গত ৩০ অক্টোবর এই সড়কের রাজনগর ইউনিয়নের জামতলা এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে শরীয়তপুর আসার পথে একই পরিবারের বাবা ও মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। ১৫ নভেম্বর জাজিরার কাজির হাট বন্দর ক্লাব মোড় এলাকায় জনি মাদবর নামের একজন মোটর সাইকেল আরোহী ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিহত হয়। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর সদর উপজেলার বুড়ির হাট এলাকায় বিআরটিসি বাস উল্টে খাদে পড়ে ১৬ জন আহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এ সড়ক চলাচলকারী লোকজনের মাঝে। 

এ ব্যাপারে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে চলাচলকারী বাসচালক নুরুজ্জামান, জামাল, বিল্লাল ও হেলপার নুরে আলম, নাসির, সাদ্দাম বলেন, পদ্মাসেতু থেকে নেমে শরীয়তপুর সড়কে এলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে চলাচল করতে হয়। ১২ ফুট চওড়া সড়ক তাও আবার খানাখন্দে ভরা। এতবড় দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়ে গেল। অথচ এই সড়কটির কাজ এখনো শেষ করতে পারলো না। 

ফোরলেন সড়কের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপদ বিভাগের শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, সড়কের কাজের মনিটরিং হচ্ছে একেবারে উচ্চ মহল থেকে আজও (সোমবার, ৫ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ে মিটিং ছিলো। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। এখন দ্রুত সড়কের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেন অপু বলেন, আমি এই এলাকার বাসিন্দা। এই সড়ক দিয়ে আমিও চলাচল করি। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। সে লক্ষে উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীম বলেন, পদ্মাসেতু থেকে শরীয়তপুর হয়ে মেঘনা সেতু পর্যন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে। অধিগ্রহণসহ সকল কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে। কাজের ব্যাপারে কোনো রকম গাফিলতি ও অনিয়ম সহ্য করা যাবে না। কাজের গুনগত মান ঠিক রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণকেও এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে হবে৷ উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম