শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষায় এগোচ্ছে পাহাড়ি জনপদ, বাধা শুধু চাঁদাবাজ গ্রুপ আর ষড়যন্ত্রকারীরা

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫৭

শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। একসময় দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল অল্প কিছু। ছিল না বিদ্যুতের ব্যবস্থা। এখন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে, রয়েছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা। বদলে গেছে পার্বত্যাঞ্চল। নতুন নতুন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ায় পার্বত্য জেলায় এখন শিক্ষার হার বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। বর্তমান সরকার তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে সুন্দর পরিবেশ। পাহাড়ি-বাঙালি শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক—এটা হোক আমাদের পরিচয়। আমরা সবাই এক, ধর্ম যার যার।

দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ, ফুল গাছে সজ্জিত স্কুলের সড়ক, বিদ্যালয়ের চারপাশে ফলদ বাগান, নানা প্রজাতির বনজ গাছ ও বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগানে সাজানো গোছানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দূর থেকে দেখে মনে হয় একটি দৃষ্টিনন্দন কোনো এক পর্যটনকেন্দ্র। যেমন সুন্দর পরিপাটি, তেমন সুন্দর পরিবেশে লেখাপড়া করায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাশের হারও শতভাগ। দেশের ৬১ জেলার মতো এই তিন জেলার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান।

এদিকে পার্বত্য তিন জেলার উন্নয়নে বড় বাধা চাঁদাবাজ গ্রুপ ও আর ষড়যন্ত্রকারীরা। মূল চার সন্ত্রাসী গ্রুপ ও এগুলোর উপ-সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ তিন পার্বত্য জেলার শান্তিপ্রিয় মানুষ। শিক্ষার্থীরাও বিরক্ত।  তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংস কোনো ঘটনা দেখতে চাই না। আমরা চাই শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুন্দর পরিবেশ। কেউ যাতে এই পরিবেশ বিঘ্নিত করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরাও মনে করে, পার্বত্যাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে। এর সুফল ভোগ করছি আমরা।

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে একটি ব্রিজ হয়েছে। এই ব্রিজের কারণে শহরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। সহজেই সেখানকার জনগণ শহরে আসতে পারে শিক্ষা ও চিকিৎসা নিতে। পাহাড়িদের অনেকেই জানান, পার্বত্য জেলাগুলোতে অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে তাদের সন্তানরা ভালো স্কুল ও কলেজে পড়তে পারছে। ফলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে। নানিয়ারচরের ব্রিজটি পার হলেই বাজার। বাজারের সঙ্গেই প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়টিকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মুকুল বিশ্বাস খীশা। তাদের ধ্যানজ্ঞান পুরোটাই বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে। পরিপাটিভাবে সাজানো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্কুলের খেলার মাঠে কোথাও একটি পাতাও পড়ে থাকতে দেখা যায়নি।

প্রধান শিক্ষক মুকুল বিশ্বাস খীশা বলেন, ‘আমরা মাতৃভাষায় শিক্ষা দিই।’ এদিকে স্কুল শেষ হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীরা দলে দলে বাসার উদ্দেশে রওনা হয়। অভিভাবকরাও আসেন না। কারণ নিরাপত্তাব্যবস্থা বিরাজ করায় অভিভাবকদের আসার প্রয়োজন পড়ে না। সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানরাও পড়ালেখা করেন এই স্কুলে। শিক্ষার্থীরা বলে, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে বসেই পাঠদান করে আসছি। কে পাহাড়ি কে বাঙালি এটা আমাদের পরিচয় নয়। আমরা এ নিয়ে ভাবিও না। আমাদের পরিচয় আমরা শিক্ষার্থী। আমরা সবাই আপনজন। সেই সম্পর্কই আমাদের  মাঝে বিরাজ করছে। কারো কোনো বিষয়ের বই না থাকলে একে অপরকে দিয়ে সহযোগিতা করি। পূর্বে পাহাড়ের অবস্থা কী ছিল, এ নিয়ে আমরা ভাবি না। জন্মের পর আমরা যখন বুঝতে শিখছি, তখন দেখছি সুন্দর একটি পরিবেশে আমরা বসবাস করছি। পাহাড়ে একে অপরের মধ্যে সুসম্পর্ক। অন্য জেলাগুলোর মতো পার্বত্যাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তিব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের পিতা-মাতাসহ অভিভাবকদের প্রত্যাশা, আমরা যেন লেখাপড়া করে বড় হই।’

ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। পাহাড়ের সুন্দর পরিবেশ যাতে বিনষ্ট না হয় কিংবা করতে না পারে সেই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা আবেদন জানিয়েছেন।

পাহাড়ি-বাঙালিরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছেন। তবে বড় বড় চারটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পাশাপাশি কিছু এনজিও আছে, যারা ধর্মীয় উসকানি দিয়ে থাকেন। শান্তিচুক্তির পর অনেক আর্মি ক্যাম্প তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব জায়গা দখল করার জন্য একটি গোষ্ঠী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যানার ব্যবহার করছে। চক্রটির কাজই হলো বিতর্ক সৃষ্টি করা। পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টির জন্য এই চক্রটি গভীর ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত। রাঙ্গামাটি শহরের পাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে একজন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে বলছে, এটা তাদের জায়গা। এ নিয়ে সেখানে সড়ক ও জনপথের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে পরিবহন যাতায়াত করে। রাস্তাটির একাংশ ধসে পড়ছে। জরুরি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার ব্যবসায়ী-বাসিন্দারা।

 

ইত্তেফাক/ইআ