সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কম খরচে কি দুবাই ঘোরা সম্ভব?  

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৩৯

দুবাই এর নাম শুনলেই মাথায় আসে বুর্জ খলিফা, স্বর্ণের বাজার এবং সীমাহীন বিলাসিতার কথা। ঘোরাঘুরির জন্য দুবাইকে কখনোই বাজেট গন্তব্যের মধ্যে ধরা হয়না। খাবার, থাকার ব্যবস্থা, যাওয়া আসা-শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা বিষয়েই যেন তিনগুণ খরচ যোগ হয়ে যায় এই শহরটিতে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হিসেবে দুবাই এর আকর্ষণ অতুলনীয়। তাই গোযায়ান খুঁজে বের করেছে এমন সব বিশেষ পন্থা যার মাধ্যমে দুবাই ঘোরাটাও সাধ্যের মধ্যে চলে আসতে পারে। কম খরচে কিভাবে দুবাই ঘুরে আসা যায়, তা নিয়েই আজকের আলোচনা। 

কম খরচে যাওয়ার ব্যবস্থা

প্রথমেই দেখতে হবে যাওয়ার খরচ। বাংলাদেশ থেকে দুবাইগামী ফ্লাইট সাধারণত বেশ ব্যয়বহুল হয়। তবে সবসময় যে একই খরচ থাকে, তা নয়। অনেকদিন আগে থেকে বুকিং করে রাখলে খরচটা তুলনামুলকভাবে কম হয়। তাছাড়া মাঝেমধ্যে এয়ারলাইন্স অথবা অন্যান্য মাধ্যম থেকেও পাওয়া যায় বিশেষ ছাড়। যেমন গোযায়ান এ এখন চলছে 'সিজন অফ ট্রাভেল'। এখানে পাবেন বিভিন্ন পেমেন্ট মাধ্যমের জন্য বিশেষ ছাড় সব ফ্লাইটের জন্য। তাই যেকোনো ফ্লাইটের ক্ষেত্রে খরচ বাঁচাতে পারবেন। আবার এখানে ব্যবহার করতে পারবেন ০% ই এম আই, যার মাধ্যমে কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে পুরো ফ্লাইটের খরচটা।

ফ্লাইট বুকিং এর ক্ষেত্রে সচেতনভাবে বুক করাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের দামের মাঝে বেশ বড়সড় পার্থক্য দেখা যায়। কম খরচে ভ্রমণ করাটাই যদি লক্ষ্য হয়, তবে বিভিন্ন ফ্লাইটের দামের মাঝে তুলনা করা প্রয়োজন। অনলাইনে দামের তুলনা করে নিজের ফ্লাইট নিজেই বুকিং করতেও দেখে নিতে পারেন গোযায়ান। এখানে দাম, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদির ভিত্তিতে পছন্দ করতে পারবেন নিজের জন্য সেরা ফ্লাইট। 

ভ্রমণের সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ

দুবাইতে কমবেশি সারাবছরই আবহাওয়া গরম থাকে। তাই বিশেষ কোন মৌসুম নেই দুবাই ঘুরার। তবেঁ ছুটির উপর ভিত্তি করে শহরটিতে পর্যটকের সংখ্যা কমে বা বাড়ে। যে সময়ে কম পর্যটক থাকে তখন ঘুরতে গেলে বেশ কিছু ট্যুর, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে বিশেষ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সাধারণত জনপ্রিয় এই শহরটি পর্যটক মুক্ত থাকে। এই সময়ে ঘুরে আসলে উল্লেখযোগ্যভাবে থাকা, খাওয়া এবং ঘুরাঘুরির খরচ কমানো সম্ভব। 

আভ্যন্তরীণ চলাচলের টিপস

কম খরচে চলাচলের কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশে যেমন রিকশা অথবা বাসের কথা মাথায় আসে, দুবাইতে তেমনি আছে বিভিন্ন গনপরিবহন। ৬ থেকে ২৫ দিরহাম আর টি এ কার্ড কেনার ব্যবস্থা আছে এখানে। এই আর টি এ কার্ড এর মধ্যেই মেট্রো, বাস, ট্রাম, ওয়াটার বাস ইত্যাদিতে চলাফেরা করা যায়। ট্যাক্সির তুলনায় এই খরচটা অনেক কম। তাছাড়া দুবাই এর গনপরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক এবং উন্নত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন যানবাহন থাকার ফলে চলাচলে কোনধরনের অসুবিধা কিংবা অস্বস্তিও অনুভূত হবেনা। 

খাবারের খরচা

দুবাই একটি "গ্লোবাল সিটি" অথবা বৈশ্বিক শহর হিসেবে পরিচিত। তাই পৃথিবীর সব দেশের জনপ্রিয় খাবারই এখানে পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান, আরব, থাই, চাইনিজ সব দেশের খাবারই চেখে দেখতে পারবেন দুবাই শহরে। তবে দেশটির বৈশিষ্ট্য যেহেতু বিভিন্ন ধরনের কাবাব, তাই মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ খাবারগুলোই আগে উপভোগ করা উচিত। 

দুবাই শহরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে আছে উটের মাংস, আরব্য কফি, চেলো কাবাব, শিশ কাবাব, শর্মা ইত্যাদি। নিরামিষ খাবারের মাঝে আছে বেগুন দিয়ে তৈরি বিখ্যাত বাবা গানুশ, ফালাফেল ইত্যাদি। মিষ্টি যদি বেশি পছন্দ হয়, তবেঁ অবশ্যই খেয়ে দেখতে হবে কুনাফা এবং মাহলাবিয়া। দুবাই এর পর্যটন ভারি অঞ্চলগুলোতে খাবারের দাম বেশি হয়ে থাকে। বুর দুবাই এবং দেইরা- এই অঞ্চল দুইটিতে পেয়ে যাবেন কম খরচের খাবার এবং স্ট্রীট ফুড। 

সাধ্যের মধ্যে শহর ঘোরা

দুবাই শহরে দেখার মত আছে অনেক জায়গা। খরচ ছাড়াই ঘুরে দেখতে পারেন ঐতিহ্যবাহী দুবাই "সুক" যেখানে নানাধরনের দৈনন্দিন জীবনের সামগ্রী কেনাবেচা হয়। বিভিন্ন পণ্যের জন্য ভিন্নধরনের "সুক" আছে দুবাই তে, যেমন- মশলা, সুগন্ধি, স্বর্ণ ইত্যাদি। নজরকাড়া কিছু সমুদ্রসৈকতও আছে বিলাসবহুল এই শহরে। জুমেইরা বীচ, লা মের বীচ, কাইট বীচ ইত্যাদি এর মাঝে কয়েকটা। ফিরোজা নীল পানি এবং ফকফকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য দুবাই এর সমুদ্রসৈকতগুলো বিখ্যাত। 

দুবাই ঘুরতে গেলে অবশ্যই পৃথিবীর উচ্চতম বিল্ডিং বুর্জ খলিফা বাদ দেওয়া যায়না। ঢুকতে একটি নির্দিষ্ট ফি লাগলেও, অনেক পর্যটক ভিড় করেন বাইরে থেকে একবার ১৬৩ তলা বিশিষ্ট ভবনটি দেখতে। তাছাড়া বাস্তাকিয়া নামক অঞ্চলে ঘুরতে পারবেন দুবাই জাদুঘর। শহরটির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এই অঞ্চলে অবস্থিত। একই অঞ্চলে আরও পাবেন গ্র্যান্ড মস্ক। এই মসজিদটিতে আছে শহরের সর্বোচ্চ মিনার। ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে জানতে পারবেন এই মসজিদটি ঘুরে। 

কমবেশি সব জনপ্রিয় পর্যটন শহরেই অল্প খরচের মধ্যে ঘুরে আসার ব্যবস্থা থাকে। যদি শখ থাকে দুবাই ঘুরে আসার, তবে অবশ্যই উচিত এখনই পরিকল্পনা শুরু করার। 

ইত্তেফাক/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন