রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সোহেল হোসেন। মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত বিহঙ্গ নামের একটি পরিবহনে যাতায়াত করেন ১৮ টাকায়। তিনি ই-টিকিটের মাধ্যমে টিকিট কাটেন। যেখানে আগে ভাড়া নিত ২০ থেকে ২৫ টাকা, সেখানে ই-টিকিট চালু হওয়ায় ভাড়া কমেছে। তবে এই টিকিট তিনি বাসের হেলপারের কাছে চেয়ে নেন। যেসব যাত্রী টিকিট চান না, তাদের ই-টিকিট দিচ্ছেন না চালকের সহকারীরা। বেশির ভাগই এখনো আগের নিয়মে হাতে হাতে ভাড়া নিচ্ছেন। হেলপারের গলায় পজ মেশিন থাকলেও সেটি ব্যবহারে অনীহা রয়েছে তাদের। খুব কমসংখক বাসেই এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজধানীতে অতিরিক্ত বাসভাড়া আদায় নিয়ে অভিযোগের কারণে তা নিরসনে ই-টিকিটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়। বর্তমানে ৩০টি কোম্পানির বিভিন্ন রুটে এই ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এতে সরকারনির্ধারিত হারে একজন যাত্রী যত কিলোমিটার যাবেন, তিনি ঠিক তত দূরত্বের জন্য ভাড়া দেবেন।
তবে সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাসে ঘুরে দেখা যায়, এখনো এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কিছু কোম্পানির বাসে ই-টিকিট কাটলেও বেশির ভাগেই কাটছে না। মিরপুর রুটে চলা বিহঙ্গ ও সুপার, শেকড়, বিকল্প, আয়াতে এই চিত্র দেখা গেছে। মেশিনে রসিদ না দিয়েই হাতে টাকা নিচ্ছে। টাকা দিলেই তারা নিয়ে নিচ্ছে। চালকের সহকারী বা ভাড়া উত্তোলনকারীরা বলছেন, খুচরা ভাড়ায় সাধারণত টিকিট কাটা হচ্ছে না। আর যাত্রীর চাপ যখন বেশি থাকে, তখন কাটা সম্ভব হয় না।
রাসেল হোসেন নামে শিকড় পরিবহনের একজন জানান, একা পুরো বাসে ই-টিকিট কাটা সম্ভব হয় না। দুজন থাকলে এটি কাটা সহজ হয়। তবে তার কথার প্রমাণ পাওয়া গেছে অন্যান্য বাসে। যেসব বাসে চালক ছাড়াও আরো দুই জন সহকারী হিসেবে আছেন, সেই সব বাসে কিছু কিছু ভাড়ার ক্ষেত্রে ই-টিকিট কাটতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে যাত্রীরা বলছেন, ই-টিকিট চালু হওয়ায় কিছু জায়গায় ভাড়া কমেছে, আবার কিছু জায়গায় বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ রুটেই ভাড়া কমেছে। তারা এটি সব বাসেই কার্যকর করার দাবি জানান।
শেকড় পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, আগে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু এখন নিচ্ছে ১৮ টাকা। আবার শাহবাগ পর্যন্ত ছিল ২০ টাকা। কিন্তু এখন নেয় ২৩ টাকা।
আবার কিছু রুটে আগে ২০ টাকা নিলেও এখন ১৮ টাকা নেয়। কিন্তু ভাঙতি নেই এই অজুহাতে আর বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
ঢাকা সড়ক ও পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ৩০টি কোম্পানির বাসে এই ই-টিকিট কার্যক্রম চালু আছে। আট জন নিয়োগ করা আছে শুধু দেখভাল করার জন্য, ঠিকমতো ই-টিকিট কাটে কি না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, আসলে শুধু ই-টিকিট দিয়ে শৃঙ্খলা আনা কঠিন, যদি ওয়েবিলের নামে বেশি ভাড়া আদায় বন্ধ না হয়।