বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দীর্ঘদিন পর আপিল বিভাগে তিন বেঞ্চ

  •  বিচারপ্রার্থীর দ্রুততার সঙ্গে বিচার পাবেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:৫৫

বিচারক সংকট কেটেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। বিচারক সংকট না থাকায় এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিনটি বেঞ্চে চলছে মামলার বিচার কাজ। আগে একটি বেঞ্চে মামলার বিচার কাজ চললেও দীর্ঘদিন পর তিনটি বেঞ্চ পুনর্গঠন করায় আপিল বিভাগে মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তিতে পেয়েছে বাড়তি গতি। যার সুফল পাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। সম্প্রতি আপিল বিভাগে তিনজন নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ায় এই বিচারক সংকট দূর হয়। এরপরই প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দেন। প্রধান বিচারপতির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং সাধারণ আইনজীবীরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, আগে আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারক ছিলেন। নতুন করে তিনজন বিচারক নিয়োগ দেওয়ায় প্রধান বিচারপতি তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। এতে বিচারপ্রার্থীরা দ্রুততার সঙ্গে বিচার পাবেন। মামলাও নিষ্পত্তি হবে বেশি। কমবে মামলার জট।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, বিচারক সংকটের কারণে আগে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে বিচার কাজ চলতো। এখন তিনটি বেঞ্চ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হবে। যার সুফল পাবে বিচারপ্রার্থীরা।

সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বর্তমানে বিচারপতির সংখ্যা ১০১ জন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ ৯ জন বিচারপতি রয়েছেন। হাইকোর্টে কর্মরত বিচারপতি রয়েছেন ৯২ জন। হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারক হিসাবে বৃহস্পতিবার নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ওই নিয়োগের পরই আপিল বিভাগে বিচারক সংখ্যা ছয়জন থেকে নয়জনে উন্নীত হয়। তবে বিচারপতি মো. ইমান আলী চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে রয়েছেন। তাকে ডিঙ্গিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ায় ছুটিতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ফলে আপিল বিভাগে বর্তমানে কর্মরত বিচারপতির সংখ্যা আটজন। এই আটজন বিচারককে দিয়েই প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রোববার আপিল বিভাগের তিনটি বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দিয়েছেন।

পুনর্গঠন আদেশ অনুযায়ী তিনটি বেঞ্চের মধ্যে এক নম্বর বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন খোদ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নিজেই। এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচার কাজ পরিচালনায় রয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম। আপিল বিভাগের দ্বিতীয় বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। তার সঙ্গে বিচার কাজ পরিচালনায় রয়েছেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী। আর তৃতীয় বেঞ্চে বিচার কাজ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আপিল বিভাগের ব্চিারপতি ওবায়দুল হাসান। দুই সদস্যের এই বেঞ্চের অপর বিচারক হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। এই তিনটি বেঞ্চে রোববার থেকে বিচার কাজ চলছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি বেঞ্চ গঠন করায় আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তিতে যেমন গতি পাবে তেমনি মামলার জট হ্রাস পাবে। 


প্রধান বিচারপতির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নুর দুলাল। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, প্রধান বিচারপতির অন্তরে সবসময় বিচারপ্রার্থীদের জন্য দরদ হয়। বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তিনটি বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দিয়েছেন তিনি। এতে বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত বিচার পাবেন। আর দ্রুত নিষ্পত্তির কারণে দীর্ঘদিন ধরে আপিল বিভাগে মামলার যে জট সেটাও কমে আসবে।
  
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, একটি বেঞ্চে বিচার কাজ চলার কারণে রিভিউ পিটিশনসহ অনেক মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছিলো। এখন একাধিক বেঞ্চ হওয়ায় দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে। এতে দুর্ভোগ কমবে বিচারপ্রার্থীদের।

ইত্তেফাক/পিও