অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং এ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে নয়াদিল্লি প্রতিক্রিয়া জানানোর পরে বেইজিং মুখ খুলেছে। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) চীনের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াং অবশ্য গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) তাওয়াং এ এলএসি লঙ্ঘন বা চীনের বাহিনীর হামলার বিষয়ে ভারতের অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ২০২০ সালের জুনে লাদাখে গালওয়ানের পরে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবার লোকসভায় অরুণাচলের তাওয়াং এ চীনের সেনাবাহিনীর হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি সরাসরি চীনের সেনাবাহিনীকে 'এলএসি লঙ্ঘনের চেষ্টা' করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। যদিও ২০২০ সালের গালওয়ান ঘটনার মতো কোনো প্রাণহানি হয়নি, কিন্তু শুক্রবার রাতের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন সেনা আহত হয়েছিল।
তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনো ভারতীয় সেনা গুরুতর আহত হয়নি। গালওয়ানের মতো, দ্বিপাক্ষিক সামরিক স্তরের নিবন্ধনের নিয়ম অনুসারে তাওয়াং এ কোন পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি।
ভারতীয় সেনার তেজপুরের ৪ নম্বর কোরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেই রাতে যখন চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাওয়াং সেক্টরের ইয়াংজি এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে, তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করে। এ সময় লাঠিসোঁটা ও পাথরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।
চীনের প্রায় ৩০০ সেনা তাদের থাং লা ক্যাম্প থেকে ইয়াংজি নদী পার হয়ে তাওয়াং সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকায় তারা সুবিধা নিতে পারেনি। এরপর সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১৫ জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল যখন ভারতীয় বাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাজুড়ে অনুপ্রবেশকারী চীনের সেনাদের বাধা দেয়। এনকাউন্টারে মোট ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে চীনের সামরিক বাহিনীর মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি ছিল। তবে বেইজিং প্রকাশ্যে এটি শিকার করেনি।
গালওয়ানের ঘটনার পরেও চীনের বাহিনীর এলএসি লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারিতে উত্তর সিকিমের নাকু লাতে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে চীনা সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন চীনের সেনা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়। নাকু লাতে সংঘর্ষে ৪ ভারতীয় সেনাও আহত হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ঘটনাকে 'ছোট গোলযোগ' বলে অভিহিত করেছে।